জাতীয়

প্রতিবন্ধী সেলিমের সুখ, তিন সন্তানের হাসিমুখ

প্রতিবন্ধী সেলিম এখন তিন সন্তানের পিতা। ছোটবেলা থেকে তিনি জীবনের সাথে লড়াই করছেন। কখনো ভাবেননি পিতা হবেন। অনেকেই তাকে তুচ্ছ চাচ্ছিল্য করতেন। কিন্তু পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসায় আজ তিনি সফল।

সন্তানদের বাবা ডাকে তিনি আপ্লুত হন। তাদের ভালোবাসায় হন আবেগতাড়িত। শত কষ্টের মাঝেও আজ তিনি অনেকটাই সুখী। অর্থনীতি সংকটাই শুধু পীড়া দেয়। স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছেন তিনি। সন্তান-সংসারের জন্য প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন কাজে।

প্রতিদিন ভোরে নারায়ণগঞ্জের ঝালকুড়ি বাসা থেকে বের হন সেলিম। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে ছুটে বেড়ান অলিতে গলিতে। সারাদিন শেষে রাতে ঘরে ফেরেন। এতে সব খরচ বাদে জমা থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই টাকা নিয়েই চলছে সংসার। কাজ শেষে যখন বাসায় ফেরেন সন্তানদের হাসিমুখ দেখে সব কষ্ট ভুলে যান তিনি। সেলিমের বড় মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আর ছোট মেয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।

বাবা দিবস (১৬ জুন) সেলিমের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সেলিম বলেন, ‘জন্ম থেকে আমার বাম পায়ে সমস্যা। ঠিকমত হাঁটতে পারি না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। এভাবেই চলছে। বিয়ে করেছি। ঘর সংসার আছে। সন্তানরা বড় আছে। খরচ বাড়ছে। অনেক কষ্ট করেই জীবন যাচ্ছে। কোনোরকমে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।’

পায়ের কারণে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতে সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘কষ্ট হলে কি করবো। পোলাপাইনের কথা মনে পড়লে, তাদের মুখের দিকে তাকালে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। তবে কষ্ট, তাদের চাহিদা মেটাতে পারি না। পাঁচ জনের সংসার। তারপর আমার অবস্থা আবার এমন। চাপ হয়ে যায়। তারপরও আল্লাহর ওপর ভরসা করে সিএনজি নিয়ে বের হই। আল্লাহর ইচ্ছায় ফিরে আসি।’

যাত্রীরা তাকে অবহেলা করে কি না জানতে চাইলে সেলিম বলেন, অনেক যাত্রী আছেন, আমার জন্য আফসোস করেন। তারা বলেন, এরকম লোক কর্ম করে খাই। বাড়তি টাকাও দেন অনেক সময়। আবার অনেকে একটু ভাব নেন। আমার অটোরিকশায় যেতে চান না। জোর করে তো আর নিয়ে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা আমাকে অনেক ভালোবাসে। কাজকর্মে সাহায্য সহযোগিতা করে। আমার দেখাশোনা করে। কি লাগবে না লাগবে জিজ্ঞাসা করে। তারা সবাই আমার খুব যত্ম নেয়। কখনো অবহেলা করে না। বিশেষ করে স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেলিম।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর কারণেই এতদিন টিকে আসি। সে সবকিছু সামলে নেয়। সে ছাড়া এতো দূর আসা সম্ভব ছিলো না। হয়তো অর্থের অভাব আছে। তবে আমাদের সংসারে সুখ আছে।’

ছেলে-মেয়েদের জন্য সরকারের একটি দাবি জানান সেলিম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কোটা আছে। আমার দাবি সরকার যেন আমার ছেলে বা মেয়েকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ’

সেলিমের বড় মেয়ে কথা মনি বলেন, ‘আমার বাবা সবচেয়ে ভালো বাবা। আমাদের অনেক আদর করেন। আমরাও বাবাকে ভালোবাসি। আল্লাহ তো তার একটা পা দেননি। তিনি যেন সুস্থ থাকেন আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করি।’

তার এক সহকর্মী আরমান বলেন, ‘সেলিম ব্যতিক্রম। তিনি কর্ম করে খান। তাকে দেখে অনেক সময় খারাপ লাগে। আবার তার কাছ থেকেই অনেক সময় অনুপ্রেরণা পাই। ’