জাতীয়

‘জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাজেটে বরাদ্দ কমেছে’

জলবায়ু সহনীয়তা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতে বাজেটে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ ব্যয় করা প্রয়োজন হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়লেও জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায়ও কমেছে।

শনিবার (২২ জুন) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর- রুনি হলে ‘সবুজ অর্থনীতি ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু, পরিবেশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানিয়েছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান।

তিনি বলেন, ২০২৪- ২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশ কম এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বাড়লেও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় প্রকৃত বরাদ্দ ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে।

এম জাকির হোসেন খান বলেন, প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এনডিসিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪১১৪.২ মেগাওয়াট। যা অর্জনে প্রতি অর্থবছরে গড়ে কমপক্ষে প্রায় ৩ হাজার ৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নবায়নযোগ্য শক্তি বাবদ মাত্র ১০০ কোটি টাকা বা মাত্র ৩.২ শতাংশ তহবিল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশে সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার।

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হারানো কর্মদিবসের আর্থিক মূল্য বিবেচনায় সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার জানিয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’র প্রধান নির্বাহী বলেন, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিশ্রুত প্রতি বছর ১১.৪ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৫ বিলিয়ন (প্রায় ২৯.৩ বিলিয়ন ডলার) প্রদানের যে উদ্যোগ নিয়েছে এ তহবিল থেকে অনুদান পেতে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে দ্বিপাক্ষিকভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

ক্রমবর্ধমান পানি, মাটি দূষণসহ শ্রমিকের দেহের ভেতরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তৈরি পোশাকের ভোক্তার ওপর পরিবেশ সংরক্ষণ ফি/করারোপের বেশকিছু সুপারিশ জানিয়েছে চ্যাঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।

জাকির হোসেন খান বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির মূল্য প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার আমদানিকারক দেশ কর্তৃক দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ নীতিমালার আওতায় আমদানিকারক দেশ খুচরা ক্রয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে পরিবেশ সংরক্ষণ করারোপ করতে বার্ষিক প্রায় ২.১৩ বিলিয়ন ডলার (২৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা) রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। 

গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স এ ২০০০-২০১৯ সালে বাংলাদেশ ৭ম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির চেয়ে বাংলাদেশে বছরে দ্রুত এবং ৩.৪২ মিলিমিটার বেশি হারে বাড়ছে। শুধুমাত্র ক্রান্তীয় ঝড়ের কারণে বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ প্রায় ১০ শতাংশ আমন ধানের উৎপাদন হ্রাসের ঝুঁকি আছে। 

সংবাদ সম্মেলন টেকসই সমৃদ্ধি কৌশল ও পরিকল্পনা নিশ্চিতে কিছু সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেগুলো হলো : জল, বন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার প্রদান করে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকৃতি ভিত্তিক টেকসই সমৃদ্ধি কৌশল প্রণয়ন; নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার; টেকসই সমৃদ্ধি অর্থায়ন কৌশল প্রণয়ন; এবং সবুজ বাজেট বাস্তবায়নে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ ব্যয় করা; দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের পাশাপাশি উদ্ভাবনী অর্থায়ন (যেমন, কার্বন ও দূষণ করারোপ, অনুদান, যাকাত, ব্যক্তিগত অনুদান, সবুজ বন্ড ইত্যাদি); সবুজ করনীতি প্রণয়ন, নিম্ন আয়ের মানুষ এবং সবুজ সেবা ও পণ্যকে সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ করারোপ হতে অব্যাহতি; দুর্নীতি, অর্থপাচার, কর ফাঁকি রোধে সব ধরনের নেতিবাচক প্রণোদনা এবং পরিবেশ-বান্ধব অবকাঠামো পরিবহন ব্যবস্থায় আইনি বাধ্যতা।

এ ছাড়াও সবুজ প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে টেকসই সমৃদ্ধি সূচক প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে বাজেটে অর্থায়ন; পরিকল্পনার প্রতিটা স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ দখল এবং দুর্যোগের ঝুঁকিকে একীভূতকরণ; জাতীয়ভাবে খাত এবং জনগোষ্ঠীভিত্তিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা; এবং জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে তা নবায়নযোগ্য শক্তি, শক্তি দক্ষতা, সবুজ উদ্যোগে ভর্তুকি, খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রকৃতিবান্ধব কৃষিতে বিনিয়োগে সবুজ কম্যুনিটি এন্টারপ্রাইজ এবং নাগরিককে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের নেতৃত্ব প্রদানের কার্বন ও দূষণ কর বাস্তবায়নে ডিজিটালভিত্তিক আদায়।