তৃণমূলে সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে সচিবদের জোরালোভাবে মনিটরিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুদ্ধাচার, সুশাসন, নির্বাচনি ইশতেহার ও বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে আয়োজিত সচিবসভা শেষে এ কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম সচিবসভা করেন তখন আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছিল, আমরা যেন বছরে অন্তত দুটি সভা করি। সে হিসেবে আমরা হিসাব করেছিলাম যে জুলাই মাসে আমরা একটি সভা করবো। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, প্রথম সভার যে বাস্তবায়ন অগ্রগতি সেটি জানতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চিঠি দিয়েছিলাম। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকের মিটিংটি করেছি।
সভায় গত সভার বাস্তবায়ন অগ্রগতি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুদ্ধাচার বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি। বাজেট বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনি ইশতেহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া, আমাদের কিছু দাপ্তরিক কাজে প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন সেগুলো যেন যত্ন সহকারে সিরিয়াসলি অনুসরণ করা হয় সে ব্যাপারে সভায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, সাধারণত আমরা যেটি করে থাকি, বাজেট বাস্তবায়নের স্বচ্ছতার কথা বলেছি। আমরা বলেছি, অধস্তন যে অফিসগুলো আছে, যেখান থেকে মানুষকে সেবা দেওয়া হয়, সেই সেবাটা যেন ঠিকমতো দেওয়া হয়। সেই কাজটা যেন জোরালোভাবে মনিটর করা হয়। মানুষের যদি কোনও অভিযোগ থাকে সেগুলো যেন খুব সিরিয়াসলি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এমন কোনও বিষয় নিয়ে সচিব সভায় আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্দিষ্ট কোনও এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না। স্পেসিফিক কিছু আলোচনা করিনি। এত সচিব নিয়ে তো আমরা এ জাতীয় বিষয়ে আলোচনা করবো না।
সচিবরাই তো মন্ত্রণালয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন- এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ। কিন্তু আমরা একজন-দুজনের অপকর্ম নিয়ে, কোনও একটি অভিযোগ নিয়ে তো এত সচিব ডেকে এনে আলোচনা করবো না। এটি তো খুব স্বাভাবিক বিষয়।
২০১২ সালের শুদ্ধাচার নীতিমালা আছে, সেটি আপডেট করার চিন্তা আছে জানিয়ে সচিব বলেন, শুদ্ধাচার নীতিমালা আপডেটের পাশাপাশি ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। আশা করছি, দ্রুত এটি চূড়ান্ত করতে পারবো।
তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট যাতে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং বছরের শুরু থেকেই যাতে সচিবগণ কর্মপরিকল্পনা নেন, সে বিষয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি ইশতেহার ও বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতি, কিশোর গ্যাং, মাদকের বিস্তারসহ নানান সমস্যা ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সচিবসভা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হয় সচিবদের এই বৈঠক। সভা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সভাপতিত্ব করেন। সভায় মন্ত্রণালয়, বিভাগের সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণত, প্রধানমন্ত্রী সচিব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন না সচিবসভায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে নানা দিকনির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।