জাতীয়

নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই, আদালতের বিষয়

কোটা নিয়ে সমাধান ‘আদালত থেকে আসতে হবে’ বলে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে করতে পারে, কিন্তু ধ্বংসাত্নক কোনো কর্মসূচি চললে ‘আইন নিজস্ব গতিতে চলবে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন....শুধু আন্দোলন না, যে সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছিল....আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের উপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে ঘরের ভেতরে বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিলো। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন এক পর্যায়ে আমি বললাম ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয়?

তিনি বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসস-এ দেখেন ফরেন সার্ভিসে দুজন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চারজন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি।

বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিল বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনদিন ভাবেনি। এমনকি কোথাও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি, ডিসি, এসপি, ওসিসহ সমস্ত জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করব। সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএস-এর প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলত, কোথাও না কোথাও চাকরি করতো। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেইসব মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না। সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ চাকির পায় সেই ব্যবস্থা করা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা নেন, তাহলে কোন কোন জেলা, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি। ৪২ বিসিএস-এ বিশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট কোন রায় দেয়, সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে তারা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না, বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে... একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই। কোনো জ্ঞানই নাই। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে। তাদের তো ধারণাগুলো দরকার। জানা উচিত। 

যখন আদালতে চলে গেল। সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না... তারা রাজপথে সমাধান করবে। আমাকে বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না। কিছুই না।

যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই। রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায় তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল। যে কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে?

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ কেন? প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন। না হলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হতো। 

পাকিস্তান আমলের বাঙালিরা যে সমস্যার সম্মুখীন হতো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা তো সেগুলো দেখিনি। ১৫-২০ বছর আগের কি অবস্থা ছিল সেটাও সকলে জানে না। বিএনপির আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজি-সেশনজট, দেশে শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের ছিল না বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজকে সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সকলে যোগাযোগ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলন করে। এ মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কার হাতে ছিল? মোবাইল বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

অনগ্রসরদের সুবিধা দেওয়ার কথা সংবিধানে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কি সংবিধানটা পড়ে দেখেছে কখনও? আর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধারা জীবনে কষ্ট করেছে। পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিচয় দিত না বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা সব কিছু মুছে ফেলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল পাকিস্তানিদের প্রদেশ হয়ে গেছি আমরা। সেইখান থেকে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে। জয়বাংলা ফিরে এসেছে। সাতই মার্চের ভাষণ ফিরে এসেছে। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভালো লাগে না। মনে গায়ে জ্বর আসে।

কোটা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধা কার কত? সেটা পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে, লিখিত পরীক্ষায়, তারপর ভাইভা হয়। সেই সময় যেটা....সেটা বাস্তব তো যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয় সেই পাবে। আর সবসময় সব কোটা পূর্ণ হয় না। যেটা বাকি থাকে তা তালিকা থেকেই দেওয়া হয়। অনেক চাকরি তালিকা থেকে দেওয়া হচ্ছে। এ নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা অগ্রাধিকার পাবে, এটা দিতে হবে। মেধা আর কোটা এক জিনিস না। এখানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা একটা কৌশল। তার মানে হলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবি না, যত রাজাকারের বাচ্চারা, নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী? তাই না। এটা ভুলে গেলে চলবে না যাদের মেধাবি না বলছে তাদের হাতে ওনারা পরাজিত। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হয়েছিল রাজাকারদের বিরুদ্ধে। এই কথাটা মনে রাখা উচিত। তাদের মেধাটা কোথায়? সেটা আমার প্রশ্ন।

পড়ুন

নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই, আদালতের বিষয় ‘আমার পিয়নের কাজ করেছে, সেও ৪০০ কোটি টাকার মালিক’ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে যারা চাকরি করছেন তাদেরও ধরা হবে ২০১৮ সালে বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলাম: প্রধানমন্ত্রী চীন বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অনুদান-ঋণ দেবে চীন সফর দেশের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে থাকবে 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর