জাতীয়

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কঠোর হয়েছি বলেই (দুর্নীতিবাজরা) ধরা পড়ছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্ত জঞ্জাল সাফ করতে হচ্ছে। এর আগে জঙ্গিবাদ ঠিক করার কথা ছিল, সেটা আমরা করেছি। জঙ্গিবাদ যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম। এখন দুর্নীতি, যেটা আমার জিরো টলারেন্স ঘোষণা আছে। আমরা ধরছি। আমরা খুঁজে বের করছি বলেই কিন্তু আপনারা জানতে পারছেন। খোঁজ না করলে তো জানা যেত না। এভাবেই চলতো। কারণ এভাবেই চলছিল। সেই ’৭৫ এর পর থেকেই এভাবে চলছে। এখন আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবেই। এখানে কোনও দ্বিধা নেই।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি না যে, এটা ধরলে আমার সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। না, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমার দায়িত্বই হচ্ছে, যে সমস্ত অনিয়মগুলো আছে সেটা ধরে একটা জায়গায় দেশকে নিয়ে আসা, সুষ্ঠু ধারায় নিয়ে আসা। সেটা আমার করার পদক্ষেপ নিয়েছি। সেটা অব্যাহত থাকবে। বিসিএসের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যারা উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি করছেন, খুঁজে বের করা গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, নেব না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনও অধিকারই থাকবে না। এখন সেটা খুঁজে দেবে কে? ওরা যদি বলতে পারে যে, অমুকের কাছে বিক্রি করেছে, তখন প্রমাণ করতে পারলে সেটি দেখা যাবে।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আনা হলেও ওই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে যারা অফিসার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমিও সেটি বিশ্বাস করি, বেনিফিসিয়ারি যারা তাদেরও ধরা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ করবে না। কারণ, ঘুষ যে দেবে আর যে নেবে উভয়ই অপরাধী। এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র যারা ফাঁস করে আর সেই প্রশ্নপত্র যারা ক্রয় করে দুজনই অপরাধী। এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এদের খুঁজে বেরটা করবে কে? সাংবাদিকরা যদি চেষ্টা করে বের, বের করে দেয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

এ সময় বিএনপির শাসনামলে বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ বা ২০০৩ সালে। বিএনপি আমলে যত পরীক্ষা হতো আর যতো চাকরি হতো… এটা কোনও পরীক্ষা না। ওই হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। আর সেই তালিকাই হতো। সে সময় ঢাকা কলেজে পরীক্ষা হয় এবং একটা বিশেষ কামড়া তাদের জন্য আলাদা রাখা হয়। যেখানে বসে তারা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে চাকরিতে ঢোকে। তখন কোনও উচ্চবাচ্য নাই। এই যে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এই অনিয়মগুলো তো তখন থেকেই শুরু।

‘আমরা সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে এই জিনিসটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের পর কোটা আন্দোলন হওয়ার পর এই গ্রুপটা কী করে যেন আবার এখানে জায়গা করে ফেলে, যেটা এখন ধরা পড়েছে। আমরা কিন্তু একটা জিনিস, অনেক সময় এসব ধরতে গেলে অনেকে বলে এটা প্রচার হলে ভালো হবে না, ইমেজ নষ্ট হবে, অমুক হবে। আমি তাতে বিশ্বাস করি না। কীসের ইমেজ নষ্ট হবে? অন্যায়, অবিচার যেটা করবে, তাকে আমি ধরবোই। তাতে আমার ওপর যত… পরোয়া করবো না। তাদের ধরতেই হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। না হয় এটা চলতেই থাকবে।’

আগামীতে যাতে এটা না চলতে পারে তার জন্য ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে মনে করতে পারে আওয়ামী লীগের সময় প্রশ্নফাঁস শুরু হয়েছে, তা ঠিক নয়। এটা আমাদের সময়ে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমলে। খালেদা জিয়ার আমলে আরও এক ধাপ বেশি…। তখন তো তালিকা আসলো, সবকিছুর তালিকা এবং যা তালিকা ওটা মানতেই হবে, না মানলে কেউ জানে বেঁচে থাকতে পারবে না। এটা ছিল বাংলাদেশের অবস্থা, এটা ভুলে গেলে তো চলবে না।

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিল, প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কোনও কথা বলতে পারছে? কী অবস্থা ছিল? এই যে অনিয়মগুলো করে রেখে গেছিল, সেটিকে আবার সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলাম। ২০১৮ সালের পর থেকে আবার কিছুটা এরা ফাঁক পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো বহু দিন থেকে পেছনে লেগে থেকে থেকে এখন ধরতে পেরেছি। ধরা পড়েছে, তদন্ত হবে, বিচার হবে।

তিনি বলেন, আমার বাসার কাজ করে গেছে পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। এটা বাস্তব কথা। কী করে বানালো এই টাকা। যখন আমি জেনেছি, তাকে বাদ দিয়ে কার্ড সিজ করে আমার ব্যবস্থা আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।

পড়ুন

নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই, আদালতের বিষয় ‘আমার পিয়নের কাজ করেছে, সেও ৪০০ কোটি টাকার মালিক’ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে যারা চাকরি করছেন তাদেরও ধরা হবে ২০১৮ সালে বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলাম: প্রধানমন্ত্রী চীন বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অনুদান-ঋণ দেবে চীন সফর দেশের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে থাকবে