শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে উত্তাল রাজপথ। শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন। রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। বিক্ষোভ কর্মসূচি কেন্দ্র করে ঢাকার তিন প্রবেশপথ শিক্ষার্থীদের অবস্থানে স্থবির হয়ে পড়ে। এ কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসূচি পালন করতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনে সমর্থন করছেন, এমন মানুষ জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছেন।
উত্তরায় এপিসিসহ পুলিশের অবস্থান
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর থেকে ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীর কাজলা ও শনিরআখড়া অংশে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা অভিমুখী সব প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবির বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সড়কে অবস্থান নেন তারা। দুপুর ২টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শনির আখড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা, বন্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবন সংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেন কয়েকজন শিক্ষকও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল খুলে দেওয়া না হলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যাব।
এর আগে, সকাল ১১টার দিকে জাবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেন তারা।
সড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
অন্যদিকে, রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য এসব এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে হুট করে তারা প্রধান সড়কে নেমে পড়েন। এতে প্রগতি সরণিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে অন্তত ৩ হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন।
বেলা ১২টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছেন পথচারী, রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মিরপুর-১০ গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, নতুন বাজার, মিরপুর-১০ ও কুড়িল বিশ্বরোডেও অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এ ছাড়া, গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ঢাকা-গাজীপুর রোডেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।