জাতীয়

সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ, নিহত ৮৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারাদেশে পালিত হচ্ছে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কর্মসূচি পালনকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং পুলিশ সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ ৮৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।

শেরপুর শেরপুরে পুলিশের গাড়িচাপায় তিন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে শহরের কলেজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাহবুবুল ইসলাম, সবুজ মিয়া ও সৌরভ। শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর রংপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। নিহতদের মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তার নাম খসরু। তবে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর সিটি কর্পোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি ও পায়রা চত্বরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

বগুড়া বগুড়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। রোবব‌ার দিনভর চলা সংঘর্ষে তা‌দের মৃত্যু হয়। দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. শামসুন্নাহার ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ মুন্সীগঞ্জে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিন জন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) সকালে জেলা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), সজল (৩০) ও ডিপজল সর্দার (১৯)।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৭ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। পর্যবেক্ষণ শেষে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

কুমিল্লা কুমিল্লায় আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নয়ন মিয়া ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (৪ আগস্ট) বিকেলে থানায় হামলা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জ শহর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৯ জন নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেনী ফেনীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন পথচারী ও সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। রোববার দুপুরে মহিপাল এলাকায় দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের দুজনের নাম জানা গেছে। একজন রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। অপরজনের নাম তৌহিদুল। বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে মারা যান তিনি।

নরসিংদী নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পাবনা পাবনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ২৭ জনসহ আহত ৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ট্রাফিক মোড় চত্বরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান।

লক্ষ্মীপুর লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে ছয় জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কাউছার, সাব্বির, ওসমান গনি, আহসান ও হারুন মেম্বার।

বরিশাল বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম টুটুল চৌধুরী (৬০)। তিনি বরিশাল মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ এস এম সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত টুটুলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

কক্সবাজার কক্সবাজার শহরে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ৯ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের গুনগাছ তলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মো. আশিকুর রহমান। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

সিলেট সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর ২টার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুদর্শন সেন ও জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. সম্রাট তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হবিগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হবিগঞ্জ শহরে সংঘর্ষে রিপন শীল (২৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের ছেলে। হামলা ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও অন্তত শতাধিক। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা সদরের টাউন হল রোডে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে রিপন শীল নিহত হন। হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মুমিন উদ্দিন রিপন শীলের মত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাগুরা মাগুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন শতাধিক। রোববার (৪ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর পৌনে দুইটা পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী (২৮), মহম্মদপুরের বালিদিয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে মো. সুমন শেখ (২৮), শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের মস্তোফার ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মো. ফরাহাদ হোসেন (২৫) ও মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ইউনুস আলীর ছেলে আহাদ হোসেন (১৮)। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. কলিমুল্লাহ ৪জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদপুর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আজাদ সরকার নামে এক বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার বিকেলে পৌরসভার সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় এ ঘটনা ঘটে। আজাদ সরকারের ছেলে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি হিমেল সরকার বলেন, ‘বাবাকে কোনো দুর্বৃত্ত নয় বরং আওয়ামী লীগের লোকজন কুপিয়ে মেরেছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

 

[ প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা ]