বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠিতে পাঠিয়েছেন। এ চিঠিতে সারাদেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ খোলা চিঠির বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিজয় চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছাড়িয়ে এ অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মন্দিরে হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মহিলা নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘু। মূলত, ৫ আগস্ট এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।
আরও বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতি আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্যি, গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে।’
খোলা চিঠিতে অবিলম্বে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রক্তক্ষরণ অবসানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে এ কয়েকদিনের সাম্প্রদায়িক হামলার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা আংশিক। প্রতিদিনই হামলার খবর আসছে। আরো ভয়ঙ্কর যে চিত্র উঠে আসছে, তা হলো হিন্দুদের রক্ষার নামে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এতে সবচাইতে বিপন্ন সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী সমাজ। দেশজুড়ে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বাসুদেব ধর। খোলা চিঠির বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও রঞ্জন কর্মকার।
মঞ্চে ছিলেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যোসেফ সুধীন মণ্ডল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি জে এল ভৌমিক। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।