জাতীয়

পণ্য বিক্রিতে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে সফল চীনের কৃষকরা 

উত্তর-পশ্চিম চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য বেছে নিয়েছেন লাইভ স্ট্রিমিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তারা সারা চীনে নিজেদের বিশেষ পণ্য, যেমন: গোজি বেরি, ভেড়া ও গরুর মাংস বিক্রি করছেন। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ভেড়া। খামারিরা নিজেরাই পণ্য বিক্রির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করছেন।

গ্রামবাসীদের এই কাজে পথ দেখিয়েছেন একজন নারী। চাং সিয়াওহোং প্রথম এভাবে নিজের খামারের ভেড়া বিক্রি শুরু করেন। তিনি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে ইমেজ পাঠিয়ে প্রতিদিন পারিবারিক খামারের ভেড়া বিক্রি করেন।

চাং সিয়াওহোং বলেছেন, ‘প্রথম যখন লাইভ স্ট্রিমিং করি, তখন আমি শুদ্ধভাবে কথাও বলতে পারতাম না। তবে, প্রথম প্রচেষ্টাতেই আমি ১০টি ভেড়া বিক্রি করে দারুণ আনন্দ পাই। তখন থেকে বিক্রি বাড়ছে। আমি প্রতিদিন ১০০, ২০০, ৩০০ ভেড়াও বিক্রি করতে পারি। এক দিনে এমনকি ৮০০ ভেড়াও বিক্রি করেছি।’

নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চোংনিং কাউন্টির তাচানছাং গ্রামের অধিবাসীরা এভাবেই বিভিন্ন পণ্য সরাসরি বিক্রি করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছেন।  তবে, লাইভ স্ট্রিমিং শেখাটা চাং এর জন্য সহজ হয়নি।  চার বছর আগে যখন প্রথম লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করেন, তখন ঠিকভাবে গুছিয়ে কথা বলতেও পারতেন না তিনি। তবে, তিনি বুঝতে পারেন, এভাবে বাজারজাত করার মাধ্যমে বিক্রি অনেক বেশি করা সম্ভব।

চাংয়ের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তাচানছাং টাউনের ৭৯ হাজার বাসিন্দা অনলাইন কমার্সে আগ্রহী হন। এই টাউনের ৬৩ শতাংশই হুই জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।

মাটন, বিফের পাশাপাশি এখানকার আরেকটি জনপ্রিয় কৃষিপণ্য গোজি বেরি। ২০২০ সালের পর থেকে এখানে লাইভ স্ট্রিমারদের সংখ্যা বাড়ে। কাউন্টির প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া ইনকিউবেশন বেস প্রতিষ্ঠিত হয়। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গোজি বেরিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রি হয়।

ইনকিউবেশন বেসের মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিমিং ক্রেজ সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এ-বিষয়ক নীতি ও চর্চা সংক্রান্ত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে অনেক কৃষকের মধ্যে। এজন্য স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা কৃষকদের কীভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইভ স্ট্রিমিং করতে হয় তা শেখাচ্ছেন। 

ইয়ুয়ানফ্যং গ্রামের পার্টি সেক্রেটারি লি সিংমেই। তিনি একজন উদ্যোগী নারী। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেছি। তাদেরকে লাইভ স্ট্রিমিং কিভাবে করতে হয়, সেটা শিখিয়েছি। জনমত ও অনলাইন রেপুটেশন বিষয়ে সচেতন করেছি। আমি সাধারণত আমার লাইভ স্ট্রিমিংয়ে নীতিসমূহ নিয়ে কথা বলি, বিশেষ করে গ্রামীণ গৃহনির্মাণ, কৃষি ও পশুখামার স্থাপনে সরকারের ভর্তুকি সুবিধাগুলো জানাই। আমরা কয়েক ডজন ভিউয়ার দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ৩০ জন থেকে তা ২ হাজার, ৩ হাজার, এমনকি ৫ হাজারে পৌঁছেছে।’

ইয়ুয়ানফ্যং গ্রাম লাইভ স্ট্রিমার, গ্রামীণ সমবায় ও কৃষকদের সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি মডেল স্থাপন করেছে এবং ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনসহ পণ্য বাজারজাতকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।

গ্রামের অনেক নারী এ থেকে উপকৃত হচ্ছেন। ইয়ুয়ানফ্যং গ্রামের একজন নারী লিন সাইসিয়া জানান, গ্রামীণ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিন মাসে ২০ হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করেছেন তিনি।

তাচানছাং গ্রামে এখন ১১৩ জন নিয়মিত লাইভস্ট্রিমার আছেন, যারা গত তিন বছরে ১৭০ মিলিয়ন ইউয়ানের বেশি বিক্রি করেছেন এবং ৬ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।