শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে ‘শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আরএমজি এবং নন-আরএমজি সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে আজ ছয়জন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি জরুরি সভা করেছি। সেখানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একটি পর্যালোচনা কমিটি বা পর্যবেক্ষণ কমিটি করব। বিগত সরকারের আমলে শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম আদালতের ওপর শ্রমিকরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, আপাতত শ্রমিকরা যে সমস্যাগুলো ফেস করছেন, তাদের দাবিগুলো যেন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে পারেন, সে লক্ষ্যে কমিটি করা হয়েছে। আরএমজি এবং নন-আরএমজি সেক্টরের শ্রম অসন্তোষ ও শ্রম পরিস্থিতির বিদ্যমান সমস্যা পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়ন ও শালিসির পরিচালককে সদস্য সচিব করে এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে তিনজন শ্রমিক নেতা, দুজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মালিকপক্ষের দুজন সদস্য আছেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আজকে উপদেষ্টাদের নিয়ে জরুরি সভায় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত গুলো হলো: শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং যথাসম্ভবে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান কমিটিগুলো পুনর্গঠন করে হালনাগাদ করতে হবে। শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটির কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে এবং শ্রম অসন্তোষ সংক্রান্ত শুনানির ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিদিনের মাঠ পর্যায়ের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে শ্রম অসন্তোষ নিরসন কমিটি করে স্থানীয় সমস্যা সৃষ্টির প্রাক্কালে/সৃষ্টির পর কালবিলম্ব না করে সমাধান করতে হবে।
এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে হবে এবং এ-সংক্রান্ত সরকারি আর্থিক ঋণ/প্রণোদনার ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হবে।
রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি পেশ করতে পারবেন, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থার কাছে পাঠাবে। শ্রমিকদের যে ন্যায্য দাবিগুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে যেটা স্বল্প মেয়াদে বা দ্রুত সমাধানযোগ্য, সেটা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ছয়টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এখানে কোনো গ্যাপ রাখতে চাচ্ছি না। সচিব পর্যায় থেকে সবাই সমন্বয় রাখবেন। যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং সমাধানের দিকে যেতে পারি, তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।