থ্রি-জিরো বা তিন শূন্য তত্ত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেগুলো হচ্ছে- দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে নিজের দেওয়া ভাষণে সেই ‘তিন শূন্য’ তত্ত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণে তিনি এ তত্ত্ব নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্বনমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে মনোযোগী হচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে এ ধরনের পরিবর্তনের সুফলভোগী করতে হলে, নেট-জিরো পৃথিবীর লক্ষ্য সমানভাবে পূরণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে, পারস্পরিক দায়িত্ববোধের মাধ্যমে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সার্বজনীন অঙ্গীকার পূরণে পিছিয়ে পড়ব।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, সমগ্র বিশ্ব এক সঙ্গে 'তিন শূন্য'-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি তরুণ-তরুণী চাকরিপ্রার্থী না হয়ে বরং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে।
ড. ইউনূস বলেন, তরুণ-তরুণীরা যেন সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজ নিজ সৃজনশীলতার বিকাশ করতে পারে, যেখানে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ সামাজিক সুফল, অর্থনৈতিক মুনাফা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতার মধ্যে একটি চমৎকার ভারসাম্য আনতে মনোযোগী হতে পারে। যেখানে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি ভোগবাদী জীবনধারা থেকে উত্তরণ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সৃজনশীল শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
তিনি বলেন, এই সময়ে উন্নত-উন্নয়নশীল সব দেশ ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ এবং নতুন একতা প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারসমূহ, সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অংশীজন (এনজিওসমূহ) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসাকে স্থান দিলেই নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনা সম্ভব। এই পদক্ষেপ একই সঙ্গে প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক গতিকে সফলভাবে রোধ করতে পারে।
উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া আয়োজিত একটি জন-বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় তার ‘তিন শূন্য’, অর্থাৎ শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের ধারণার ব্যাখ্যা করেছিলেন।