জাতীয়

‘সব পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হবে’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার—সকল পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, সংলাপ একটি চলমান প্রক্রিয়া, জনআকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে বহু মত থাকবে। এ ধরনের আলোচনাকে ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে দিতে হবে। উপমহাদেশে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকারের কাঠামো চালু থাকলেও এখনও আমরা একে শক্তিশালী করে তুলতে পারিনি। আইনে অনেক কিছু থাকলেও আমরা সেসব কার্যকর করতে পারিনি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দৃঢ় হতে হবে। স্থানীয় সরকারের সংস্কারের দাবিগুলো উত্থাপন করা দরকার নির্বাচিত সরকারের কাছে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার করলে পরবর্তীতে তারা তা অব্যাহত রাখবেন কি না, সে নিশ্চয়তা নেই। তাই, যারা জনপ্রতিনিধি হবেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে যেসব রাজনৈতিক দল, তাদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে হবে। 

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবাদানের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষ করে, ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো অত্যন্ত প্রকট। সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও—এ ত্রিমুখী টানাপোড়েনে উপজেলা পরিষদ যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারছে না। আইনে উল্লেখ থাকলেও হস্তান্তরিত কার্যক্রমগুলো এখনও উপজেলা পরিষদের কাছে যথাযথভাবে ন্যস্ত করা হয়নি। জেলা পরিষদের কাজ কী, জেলার মানুষের কোন উপকারে তারা পাশে থাকেন, এ সম্পর্কে কারোরই কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পৌরসভা এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের পরামর্শ উপেক্ষা করা যায় না। সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের নগর সরকার গঠনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, আমরা সংস্কার চাই নাকি কাঠামোগত বিপ্লব চাই, সেটা সুস্পষ্ট করতে হবে। সামনের দিকে এগোতে হলে সরকারি ও বেসরকারি— উভয় পক্ষকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। সংস্কারে নাগরিক সমাজ যেমন একটি অংশ, আমলাতন্ত্রকেও এর অংশীজন হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। তৃণমূল জনগণের কাছ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব হতে হবে পূর্ণাঙ্গ, যা সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ অবশ্যই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে। সকল সংস্কারের লক্ষ্য হতে হবে সুশাসন কায়েম করা ও জনসেবা নিশ্চিত করা।

স্বাগত বক্তব্যে গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ পদক্ষেপগুলো কার্যকর হয়নি। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি দলপুষ্ট হওয়ায় দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারা ব্যতিব্যস্ত থাকেন। পক্ষান্তরে, জনআকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো পেছনে পড়ে যায়। আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও সক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার। তবেই জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে।

ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ১১, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ অনুচ্ছেদগুলোতে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার থাকবে এবং এ সকল প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট ক্ষমতা, বিশেষত আর্থিক ক্ষমতা দিতে হবে।

সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন—দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ অনেকে।