জাতীয়

বিচার বিভাগ সংস্কারে এবি পার্টির ১৫ প্রস্তাবনা

বিচার বিভাগের সংস্কার ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ১৫ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি)।

রাজধানীর বিজয়নগরে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা পেশ করেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক প্রমুখ।

এবি পার্টির ১৫ দফা প্রস্তাবনা হলো :

১. অবিলম্বে সুপ্রীম কোর্টের  অধীনে আইন ও বিচার বিষয়ক প্রশাসনিক সচিবালয় গঠন করতে হবে যার নিয়োগ, বদলি, পদন্নতির পুরো এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হবে।

২. অ্যাটর্নী জেনারেলের অফিস, পাবলিক প্রসিকিউশনের অফিস, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগসহ সকল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।

৩. ফৌজদারী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্ত ব্যতীত পুলিশের ভূমিকা থাকতে পারবে না; দীর্ঘসূত্রীতা এড়িয়ে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ কারণে একই সচিবালয়ের অধীনে স্বাধীন প্রসিকিউশন টিম গঠন করতে হবে। 

৪. বিচারিক যোগ্যতা, মেধা, অভিজ্ঞতা, বিবেকবোধ, সততা ও নিষ্ঠা হতে হবে বিচারক ও বিচারপতি হবার একমাত্র যোগ্যতা। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হতে পারবে না।

৫. যে সকল বিচারক ও বিচারপতি অর্থ, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য জুলুম করেছেন, ঘুষের বিনিময়ে রায় দিয়েছেন, নির্বাহী বিভাগের গোলামী করে বিচারের নামে অবিচার করেছেন তাদেরকে তদন্ত সাপেক্ষে চাকরিচ্যুত অথবা অন্য কোন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অথবা অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠিত হতে পারে।

৬. আইন পেশায় নূন্যতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা ব্যতীত নিম্ন আদালতের বিচারক হতে পারবে না। মামলা জট কমাতে জনসংখ্যার অনুপাতে বিচারকদের সংখ্যা ও বিচারপ্রার্থীদের সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও বিভিন্ন ল’ কলেজের পাঠ্য কারিকুলাম ও পঠন পদ্ধতিকে ঢেলে সাজাতে হবে।

৮. বার কাউন্সিলকে আইনজীবিদের স্বার্থ ও পেশার মর্যাদার জন্য পুনর্গঠন জরুরি। সেক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের বার কাউন্সিল নীতিমালা সকল পক্ষের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে পুনর্লিখন জরুরি। 

৯. যারা আইন পেশায় নিয়োজিত হতে চান, তাদের বার কাউন্সিলের অধীনে এক বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে কোন মেধাবী ছাত্রকে কোর্স থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এখানে মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে আইনজীবি হিসেবে নিবন্ধিত হবেন, আর কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন না।

১০. জেলা ও উচ্চ আদালতের বার অ্যাসোসিয়নের বাধ্যতামূলক সদস্য হবার বিধান বাতিল করতে হবে, এটা ঐচ্ছিক থাকবে। শুধু বার কাউন্সিলের সদস্য থাকাটা সকল আইনজীবির জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে।

১১. আদালত প্রাঙ্গনে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মিছিল, মিটিং, শ্লোগান, ব্যানার, পোষ্টারিং করে আদালতের ভাবমূর্তি হেয় করবার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বারকে বিচারিক আদালতের সীমানা থেকে আলাদা করবার ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. দেশের আবহাওয়া ও জনমানুষের সংস্কৃতিকে ধারণ করে এমন আরামদায়ক কিন্তু পেশাদার পোশাকের প্রচলন করতে হবে।

১৩. সংবিধান সংশোধন করে আপীল বিভাগকে সুপ্রীম কোর্টের মর্যাদা দিতে হবে; হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ দুটোই সুপ্রীম কোর্ট হতে পারে না।

১৪. ৪০ লক্ষাধিক মামলার জট কাটাতে একটা কমিটি করে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রত্যেক স্তরে বিচারিক প্রশাসন গঠন, আপিল করবার সীমা বেধে দেয়া, পরাজিত পক্ষকে খরচের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে বিচারিক সচিবালয়ের অধীনে ইউনিয়ন/উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ জরুরি বলে মনে করে এবি পার্টি। প্রত্যেকটি বিভাগ এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে হাই কোর্টের বেঞ্চ গঠন করতে হবে বিচার বিভাগীয় সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে। 

১৫. লক্ষ লক্ষ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী ‘ফৌজদারী মামলা পুনর্মূল্যায়ন কমিশন’ (Criminal Cases Review Commission) গঠন করতে হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আর যারা এসকল বেআইনি কাজে জড়িত ছিল, তাদেরকে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও নাক গলানো থেকে এই রাষ্ট্রীয় স্তম্ভকে রক্ষা করবার আহ্বান জানাচ্ছি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে। গত মাসে আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আশা করছি, অতি দ্রুত বাকী সদস্যদের মনোনীত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে এবং তারা দেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্র-জনতার মতামত ও গনঅভ্যুত্থানের মননকে ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা জাতির সামনে পেশ করবেন।

উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, আহমেদ বারকাজ নাসির,  সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান মিলু, শরণ চৌধুরী, পল্টন থানা আহবায়ক আব্দুল কাদের মুন্সিসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।