জাতীয়

সাড়ে ৫ বছরে নিহত ৩৫ হাজার, ক্ষতি ৮৮ হাজার কোটি টাকা

দেশে গত সাড়ে ৫ বছরে ৩২ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন’।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন বলেছে, এসব মৃত্যুর অধিকাংশই ঘটেছে বাইক দুর্ঘটনায়।

২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে সংগঠনটি।এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে। পাশাপাশি নিজস্বভাবে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

গত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে, রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে তার আর্থিক মূল্য ৮৭ হাজার ৮৮৪ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার টাকার মতো।

ফাউন্ডেশন বলছে, এ সময় ৩২ হাজার ৭৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন নিহত হন, আহত হন ৫৩ হাজার ১৯৬ জন।

সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৬৬৯টি দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটরসাইকেল জড়িত, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৩ জন।

এসব দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৩৫৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাসের চালক ও কর্মী মারা গেছেন ৫ হাজার ২৬১ জন অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ হাজার ৯৪২টি দুর্ঘটনা, অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে, ১১ হাজার ৬৯৮টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫ হাজার ৬৩টি গ্রামীণ সড়কে, ৩ হাজার ৯৭৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৫৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার ১৬৭টি দুর্ঘটনা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, যা ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এছাড়া ৬ হাজার ৮৪৩টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮ হাজার ৬৩১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৪ হাজার ৩৩৬টি দুর্ঘটনা যানবাহনের পেছনে আঘাত করায় ঘটেছে।

এসব দুর্ঘটনায় ৫৭ হাজার ৫৩৩টি যানবাহন সম্পৃক্ত ছিল বলে জেনেছে রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে ৭৩২৯টি বাস, ১৪ হাজার ৬২০টি পণ্যবাহী যানবাহন, ২ হাজার ৪৯৯টি মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স ও এসইউভি, ১২ হাজার ৩৬১টি মোটরসাইকেল এবং ১০ হাজার ৮৯০টি তিন চাকার বাহন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ দুর্ঘটনায় ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রাণহানি হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ দুর্ঘটনায় ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ দুর্ঘটনায় ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ দুর্ঘটনায় ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ দুর্ঘটনায় ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ দুর্ঘটনায় ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ মানুষ মারা গেছে।

দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির হিসাব নিয়ে ফাউন্ডেশন বলেছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ অর্থ যোগ করতে হবে।

দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য না পাওয়ায় সম্পদের আর্থিক পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি বলে সংগঠনটির ভাষ্য।