জাতীয়

দেশের ৮০ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিক অটোমেটেড মেশিনের দিকে ঝুঁকছে

আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিক অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় মেশিন ক্রয় করে কারখানা পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। এ সময়ে বিগত সময়ের তুলনায় অটোমেশন ১৩ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পাবে। এতে প্রতি মেশিনে ১ থেকে ৬ জন শ্রমিক যুক্ত হতে পারে।

বর্তমানে গড়ে কর্মরত ২,২৫০ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৫০০ জন অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে। অটোমেশনের অধিক দক্ষতা ও  তুলনামূলক কম উৎপাদন খরচের কারণে আগের চেয়ে ২২ শতাংশ উৎপাদন বাড়তে পারে। তবে উৎপাদন বাড়লেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক অটোমেশনে যুক্ত হতে না পারার আশঙ্কা থাকায় এই শিল্পে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়তে পারে।  

সোমবার (২১ অক্টোবর) গুলশানে একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে ‘ভবিষ্যতমুখী পোশাক শিল্প: টেকসই বৃদ্ধির জন্য অটোমেশন ও শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন লাইটক্যাসল পাটনার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।

উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশের ২৬৭ জন পোশাক কারখানার মালিক, বিদেশি ক্রেতা ও পোশাক শ্রমিকদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল ঢাকার ২০টি পোশাক কারখানার উপর জরিপ করা হয়। জরিপে এই বিষয়গুলো উঠে আসে। শিমি টেকনোলজি নামে একটি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য সূত্রে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে এই সংলাপের আয়োজন করে। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এপিও) এর ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার গড় লেভেল ৯.২ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশী শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার গড় হার ৫.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, এক বছরে এই হার কমে ২.২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে একই সময়ে ভিয়েতনামে ৪.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিদক্ষতা ও অটোমেশিনের সমন্বয়ের কারণেই ভিয়েতনামে এটা সম্ভব হয়েছে।

উপস্থাপনায় উল্লিখিত জরিপের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, সাক্ষাত প্রদানকারীদের মধ্যে দেশের ৯৩ শতাংশ অপারেটর অটোমেটেড মেশিনে যুক্ত হয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে ৭০ শতাংশ নারী অপারেটর আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে নতুনভাবে দক্ষ হতে আগ্রহী।

এই বিবেচনায় অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনায় এই শিল্পে আশঙ্কার পাশাপাশি সম্ভাবনার দিকটিও তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, প্রথাগতভাবে কাজ করলে বেকারত্ব বাড়লেও মেশিনগুলো প্রকৌশল, প্রোগ্রামিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কর্মীদের দক্ষ করে তুললে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।  

এতে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার আইয়ূব নবী খান, প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার শামস জামান, টেকনোহেভেন কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ এন করিম, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির সাবেক নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

আলোচনায় বক্তারা এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে শিল্প নেতৃবৃন্দের প্রতি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় ও শ্রমিকদের দক্ষতায় আপডেটেড বা অগ্রসর প্রযুক্তি ক্রয় করা, শ্রমিকদের আপস্কেলিং ও রিস্কেলিং করা, শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পোশাক কারখানায় কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে সার্কুলারিটির উপর গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। একই সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য সূত্রে ২০২৩ অর্থবছরে এই খাতে জিডিপির অবদান ১০. ৩৫ শতাংশ। এই শিল্পে কর্মরত রয়েছেন ৪ মিলিয়নের বেশি বা ৪০ লাখের অধিক পোশাক শ্রমিক। যাদের ৬০ শতাংশই নারী।