গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু ছিল না। দেশে রাজতন্ত্রের আদলে ছিল পরিবারতন্ত্র। কথাসাহিত্যিক, কবি ও সাংবাদিক এহ্সান মাহমুদের ‘স্বাধীনতা গণতন্ত্র মানবাধিকার: আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ ২০০৯-২০২৩’ বই নিয়ে পাঠ পর্যালোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। বইটিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের দলিল হিসেবে আখ্যায়িত করেন তারা।
শনিবার (নভেম্বর) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সভা’ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আদর্শ’ এই পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনায় সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘কবি-সাহিত্যিকদের কতিপয় সাধারণত রাজপথের প্রতিবাদে অংশ নেন। এহ্সান মাহমুদ তেমনই ব্যতিক্রম। কথাসাহিত্য, কবিতা এবং সাংবাদিকতা–তিন শাখায় তিনি সক্রিয়। এ কারণে তার সাংবাদিকতার ভাষা সাবলীল ও গতিময়।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের অগ্রভাগে যেসব ছাত্র, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের যারা ছিলেন তাদের সমঝোতায় আসতে হবে। আগে নির্বাচন নাকি সংস্কার–এ নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার অবসান জরুরি।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার অবশ্যই দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘এহ্সান মাহমুদের বইটিতে যেসব লেখা রয়েছে, তার কিছু সমকালে যখন ছাপা হয় তখনই পড়া হতো। সবাই তখন গতানুগতিক লিখতেন না, এহ্সানের লেখা পড়ে মনে হতো কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও তো লিখছেন।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে আমার মনে হয়, সে সময় স্বাধীনতার একটা নিজস্ব ব্যাখা ছিল। তাঁর বাইরে কেউ কিছু বললে বা ভাবলে আর স্বাধীনতা থাকত না। ফলে স্বাধীনতা না পারতাম ধারণ করতে, না পারতাম চর্চা করতে। স্বাধীনতা ছিল শুধু একটি দলের।এতদিনে রাজতন্ত্রের আদলে ছিল পরিবারতন্ত্র। আমিই ক্ষমতায় থাকব, আর কাউকে আসতে দেব না–এমন ফ্যাসিবাদী মানসিকতার মধ্যে কোনো মানবাধিকার থাকে না। টেলিভিশনে টকশোতে কে যাবেন তাও তখন বলে দেওয়া হতো।’
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘এহ্সান মাহমুদের বইটির ভূমিকায় বন্ধু সাংবাদিক নূরুল কবীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আশা করি এহ্সান মাহমুদ যেন ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের নিয়েও একই রকম প্রশ্ন, একই রকম জিজ্ঞাসা ও সমালোচনা জারি রাখেন। আমরাও আশা করব, এহ্সান মাহমুদ তার কণ্ঠ সরব রাখবেন।’
নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন দেশ ছেড়েছিলাম তখন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। ১৭ বছর পরে যখন দেশে এসেছি তখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। বাইরে থেকে দেশে ঠিক কী হচ্ছে তা বোঝা যায় না, এমন অবস্থায় এহ্সান মাহমুদের বইটি পরিস্থিতি বুঝতে আমাকে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর ৫০টি বই পড়ার ইচ্ছা রয়েছে, এটি ৩২তম। কোথাও গেলে বইয়ের দোকানে সে দেশের পলিটিক্স নিয়ে, পলিটিক্যাল পার্টি নিয়ে অনেক বই দেখতে পাই। এগুলো সময়ের দলিল। কিন্তু আমাদের দেশে পলিটিক্যাল বই ওইভাবে প্রকাশ হতে দেখিনি। মহিউদ্দিন আহমেদ কিছুটা করছেন। এহ্সানের বইটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের দলিল।’
অনুষ্ঠানে এহ্সান মাহমুদ বইটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি যখন ক্ষমতাবানের কাছে যাই, তখন তার দুর্বল দিক খুঁজে বের করি এবং সমালোচনা করি। সেই ব্যক্তি আমার যত প্রিয়ভাজন হোক না কেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন এবং লেখক পারসা সানজানা সাজিদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বঙ্গীয় সাহিত্য সভার পক্ষে সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র এবং আদর্শের মাহাবুব রাহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিলুফার ইয়াসমিন।