জাতীয়

নেপাল-ভুটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের আহ্বান 

মোংলা বন্দরকে বিশ্বমানের নিরাপদ ও আধুনিক সমুদ্রবন্দরে পরিণত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এ বন্দর ব্যবহার করতে নেপাল ও ভুটানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) খুলনায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আহ্বান জানান নৌ উপদেষ্টা। 

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এ সমুদ্র বন্দরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অর্থনীতিতেও বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। রাজধানী থেকে বন্দরটির সড়কপথে দূরত্ব মাত্র ২১০ কিলোমিটার। এ বন্দরের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তের রেল ও নৌ যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং, এ বন্দরকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। মোংলা বন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশকিছু প্রকল্প চলমান আছে। কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, চলমান প্রকল্পগুলো হলো: নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’, ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’, ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্প’, ‘পশুর চ্যানলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প’, ‘মোংলা বন্দরের দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় থাকা প্রকল্পগুলো হচ্ছে—‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প’, মোংলা বন্দর চ্যানেলে ৫ বছর মেয়াদি সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প‘, ‘পশুর চ্যানেলে নদীশাসন এবং মোংলা বন্দরের আরো সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প’।

তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের বার্ষিক সক্ষমতা বাড়বে। চ্যানেলে ৮.৫ সিডি গভীরতা অর্জিত হবে। এতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ মোংলা বন্দরে হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। মোংলা বন্দরে বার্ষিক প্রায় ৮ লাখ টিইউ কন্টেইনার, ৪ কোটি মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়বে।

বন্দরের কার্যক্রমকে আরো বেশি গতিশীল ও আমদানি - রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে রাজস্ব বিভাগকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোংলা বন্দরে স্ক্যানার স্থাপনের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা। বন্দরের নাব্য বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন আছে, উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য নিজস্ব দুটি ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

নেপাল ও ভুটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, নেপাল ও ভুটান মোংলা বন্দর ব্যবহার করলে মোংলা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আসবে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বন্দরের আরও বেশি প্রচার করা দরকার। মোংলা বন্দরের সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত বুকলেট তৈরি করে আমাদের বিদেশি মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রচার বাড়াতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পত্র দেওয়া হবে বলে জানান নৌ উপদেষ্টা। এ সময় দেশের সব নদীবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দরকে নিয়ে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরী করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

মোংলা বন্দরকে ব্র্যান্ডিং করতে এবং বন্দরের কার্যক্রমকে  দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ মোংলা বন্দরে ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও মতবিনিময় সভায় জানান নৌপরিবহন উপদেষ্টা। 

সভায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।