বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২৫ সালের হজযাত্রীদের জন্য দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সাধারণ প্যাকেজ, অন্যটি বিশেষ প্যাকেজ। সাধারণ প্যাকেজে কোরবানি ছাড়া সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে মোট ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে, ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে সাধারণ হজ প্যাকেজের ক্ষেত্রে ৬৬ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ পাকেজে মাত্র ৩০০ টাকা কম।
বুধবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষ থেকে ‘সাধারণ হজ এজেন্সি মালিকবৃন্দ’ নামে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন হাবের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ফারুক আহমেদ সরদার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাবের সাবেক মহাসচিব ও এজেন্সি মালিকদের নেতা ফরিদ আহমেদ মজুমদার, মাওলানা মাহবুবুল হক, মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার, মাওলানা ফজলুর রহমান, মুফতী মোস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা হাফেজ নূর মোহাম্মদ, মোবারক উল্লাহ শিমুল, মাওলানা মতিউর রহমান, মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, গোলাম কবির, মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন, মাওলানা ফজলে ইলাহী, মো. হানজালা, মো. এহছানুল হক প্রমুখ।
মূলত তারা হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) বিদায়ী নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন এজেন্সির মালিক। এবার উক্ত সংগঠন নিয়ে বিরোধ দেখা দেওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কারণে হাবের ব্যানারে তারা হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেননি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের হজ প্যাকেজ থেকে ৮৩ হাজার ২০০ টাকা কমিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল হাব। চলতি বছর সাধারণ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছিল কোরবানি ছাড়া ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা।
আগামী বছরের জন্য দুটি প্যাকেজে যে টাকা কমানো হয়েছে তাতে বেসরকারি হজযাত্রী কোটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফারুক আহমেদ সরদার বলেন, খাবার খরচ যুক্ত করে সাধারণ হজ প্যাকেজ ও বিশেষ হজ প্যাকেজ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য কোরবানি ছাড়া সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য মোট ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঘোষিত দুটি প্যাকেজে খাবারের ব্যয় যুক্ত থাকলেও কোরবানির খরচ অন্তর্ভুক্ত নয়। কোরবানির জন্য হাজিদের আনুমানিক আরও ৭৫০ রিয়াল সঙ্গে নিতে হবে।
ফারুক আহমেদ আরো জানান, সাধারণ প্যাকেজে মক্কার অনুর্ধ্ব তিন কিলোমিটার দূরে হাজিদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আর মদিনায় আবাসন হবে অনুর্ধ্ব দেড় কিলোমিটার দূরে।
এ বিষয়ে হাবের বিদায়ী কমিটির মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সেবার মান নিশ্চিত করে বিমান ভাড়া, প্রয়োজনে আলাপ আলোচনা করে সৌদি অংশে ফি কমিয়ে যতটুকু সম্ভব সরকারের কাছে প্যাকেজ খরচ কমানোর দাবি জানাচ্ছি। আল্লাহর মেহমানদের জন্যও এটি স্বস্তিদায়ক হবে।
সরকারিভাবে খরচ কমানো হলে আমরাও খরচ কমিয়ে পাকেজ সমন্বয় করবো। বলেন তিনি।
সরকার যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তাতে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ রয়েছে জানিয়ে ফরিদ মজুমদার বলেন, এতে হজযাত্রীদের খরচ কমবে না, বরং বাড়বে। সরকার ঘোষিত প্যাকেজে খাবারের খরচ ধরা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজযাত্রী ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে অবশ্যই স্ব স্ব এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে অথবা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে রসিদ গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবেন।
হজে যেতে ইচ্ছুকদের মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে লেনদেন করতে বারণ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রত্যেক হজযাত্রী হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সুযোগ সুবিধার বিষয়ে অবগত হয়ে এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। এ বছর ৬৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সীরাও হজে যেতে পারবেন।
গত ৩০ অক্টোবর দুটি সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। ঘোষিত সরকারি সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর চলতি বছরের চেয়ে এই হজ প্যাকেজ-১ এর মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কমেছে। চলতিবছর সরকারিভাবে হজে যেতে খরচ হয়েছিল সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। তবে আগে যেখানে এক দেড় কিলোমিটার দূরত্বে হোটেল ভাড়া ছিল, এবার প্যাকেজে চার কিলোমিটার দূরত্বে ধরা হয়েছে। এত দূরে হোটেলে অবস্থান করা হজযাত্রীদের মধ্যে অনীহা রয়েছে বলে বেশির ভাগ এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন। ফলে, খরচ কমানো হলেও এটি তেমন কাজে আসছে না বলেও জানান তারা।
তাছাড়া আগামী বছরের জন্য সরকারিভাবে সাধারণ হজ প্যাকেজ- ২ এর খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। ২০২৪ সালের তুলনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর মূল্য ১১ হাজার ৭০৭.৬৮ টাকা কমেছে।
২০২৫ সালের ১৪৪৬ হিজরি সনের ৯ জিলহজ (২০২৫ সনের ৫ জুন) চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।