জাতীয়

মেট্রোরেলে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি ও ভোগান্তি

মেট্রোরেলের একমুখী যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল টিকিট) সংগ্রহ করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতিটি স্টেশনে একমুখী যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল টিকিট) কাটার জন্য ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

রোববার (১০ নভেম্বর) মেট্রোরেলের মতিঝিল, সচিবালয় থেকে পল্লবী পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্টেশনে এচিত্র দেখা গেছে।

এ সময় অফিস আওয়ারে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। টিকিট সংকট থাকায় এমআরটি ও র‌্যাপিড পাস যাদের নেই, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেট্রোরেলে একমুখী যাত্রার ৩ লাখ ১৩ হাজার টিকিট ছিল। এর মধ্যে দুই লাখ টিকিট যাত্রীরা নিয়ে গেছে। ১৩ হাজার টিকিট নষ্ট। মেট্রোরেলে এখন এক লাখ টিকিট আছে। দুই লাখ টিকিট খোয়া যাওয়ায় দেখা দিয়েছে এই টিকিট সংকট।  

মিরপুরের বাসিন্দা মো. আলী হোসেন বলেন, ইত্তেফাক মোড় এলাকায় ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন আমাকে যেতে হচ্ছে। বাসের চেয়ে মেট্রোরেলে ভাড়া বেশি হওয়ায় আগে মেট্রোরেলে যেতাম না। এখন সময় সেইফ করার জন্য মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোতে খুব সহজেই আসা-যাওয়া করছি। তবে টিকিট সংকটের কারণে স্টেশনের লাইনে এক ঘণ্টার বেশি সময় কেটে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আমার দাবি, এ ভোগান্তির দ্রুত সমাধান করুন।

মাদারীপুর থেকে আসা দুই শিক্ষার্থী মো. ছানোয়ার ও আরাফাত হোসেনরে সাথে কথা হয় মেট্রোরেল সচিবালয় স্টেশনে। তারা বলেন, দুটি সিঙ্গেল টিকিট কেটে সচিবালয় স্টেশন থেকে উত্তরা যাবো। এক ঘণ্টা বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে দুটি টিকিট সংগ্রহ করি। স্টেশন থেকে ভিতরে প্রবেশের সময় আমার টিকিট যখন রাখলাম তখন দেখলাম আমার সাথে সাথে আরো একজন প্রবেশ করেছে। পরে সেখানে থাকা মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তাকে আমি বিষয়টি বললাম। মেট্রোরেল কর্মকর্তা তখন তার কাছে টিকিট চাইলে তিনি টিকিট দেখাতে না পারায় তাকে বের করে দেন। মেট্রোরেল স্টেশনে মনিটরিংয়ে অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে মেট্রোরেলের কর্মকর্তা বলেন, একমুখী যাত্রার টিকিটের (সিঙ্গেল টিকিট) যাত্রীর স্টেশনে ইন (প্রবেশ) বা আউট (বাহির) হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট গেট আছে। এই গেটকে অটোমেটেড ফেয়ার কালেকশন (এএফসি) বলে। প্রতিটি গেট টিকিট পাঞ্চ করা যাত্রীর শরীরে কোনো ধাক্কা না লাগে সেজন্য কিছু সময় খোলা থাকে। এ সময় অনেক যাত্রী টিকিট পাঞ্চ না করেই অন্য যাত্রীর সাথে বেরিয়ে যান। এ কারণেও অনেক টিকিট খোয়া গেছে। পাশাপাশি অন্য কারণেও মেট্রোরেলের টিকিট খোয়া যেতে পারে। আমাদের স্টেশনগুলোতে আগে আনসাররা সহায়তা করতো। একটা ঝামেলার কারণে অনেক আনসার অনুপস্থিত । এ কারণে মেট্রোরেল স্টেশনে মনিটরিংয়ের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দুটি স্টেশনে দুষ্কৃতকারী হামলা করেছিলো সেখান থেকেও কিছু ম্যাটারের টিকিট খোয়া যেতে পারে। বর্তমান সরকার সব বিষয়ে মনিটরিং করে দ্রুত সব সমস্যাগুলো সমাধান করবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, মেট্রোরেলে সিঙ্গেল টিকিট নিয়ে যখন যাত্রীরা অটোমেটেড ফেয়ার কালেকশন (এএফসি) গেট পার হয় তখন কিছু সময় গেটটি খোলা থাকে। এ সুযোগে কিছু যাত্রী বের হয়ে যেতে পারে। এএফসি নষ্ট থাকলেও কিছু যাত্রী টিকিট জমা না দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। কত যাত্রী সিঙ্গেল টিকিট নিয়েছেন আর কত টিকিট জমা পড়েছে, তা মিলিয়ে দেখা দরকার।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, মেট্রোরেলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুই লাখের মতো সিঙ্গেল টিকিট স্টেশন থেকে নিয়ে গেছে। আমাদের লোকবলের ঘাটতি আছে। যাত্রীদের বেশি চাপ হলে হিমশিম খেতে হয়। আর অনেক যাত্রী এএফসি গেট কিছু সময় খোলা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিকিট না রেখেই চলে যায়। লোকবল কম থাকায় অনেক সময় সঠিকভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না। মনিটরিং আরো বাড়ানো হবে যাতে একটি কার্ডও বাইরে চলে না যায়। কী কারণে এত কার্ড বাইরে চলে গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে কিউআর কোড ব্যবহার করে মেট্রোরেলে মনিটরিং বাড়ানো যায় কি না, আমরা কাজ করছি। মেট্রোরেলের সিস্টেম আরো মোডিফাই করার চেষ্টা করছি।