জাতীয়

‘নিরাপদ সুনামগঞ্জ’ গড়ে তুলতে ৪২৮ কোটি টাকার প্রকল্প

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের ৫৬টি প্রাইমারি স্কুল কাম ফ্লাড সেন্টার, সোলার পিভি ন্যানো গ্রীড, সড়ক বাতি স্থাপনসহ সংযোগ সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণসহ বৃক্ষরোপণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৮ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা। বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) ও সরকারি অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘রিসাইলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডপটাশন অ্যান্ড ভালনাবিলিটি রিডাকশন (আইভিইআর) প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। মূল প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৪৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ (আইডিএ) ৪২৭৫ কোটি টাকা এবং সরকার যোগান দেবে ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারিত শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা।

প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্দেশ্য হিসেবে সূত্র জানায়, প্রকল্পের অধীনে জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অধিকসংখ্যক জনগোষ্ঠীর বন্যা ঝুঁকি কমিয়ে আনা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া দেওয়ায় দেশের সক্ষমতা উন্নয়ন, দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এবং দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রয়োজনীয়তা নিরুপনে এলজিইডির রিপোর্টিং পদ্ধতির উন্নয়ন; শিক্ষা প্রসারে সুযোগ সৃষ্টি করা, দুর্যোগের প্রাথমিক প্রস্তুতি ও সাড়া দিতে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় দারিদ্র্য হ্রাস করা।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, গবাদি পশুর আশ্রয়ের জন্য বিদ্যালয়ে মাঠ উন্নয়ন, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সোলার ন্যানোগ্রীড সিস্টেম স্থাপন, আশ্রয়কেন্দ্র সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, কমিউনিটি রাস্তার উন্নয়ন, নৌঘাট নির্মাণ, সেল্টার প্রাঙ্গণের রাস্তায় সৌরবাতি স্থাপন, বজ্রপাত সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে একটি প্যাকেজ করা হয়। প্যাকেজটির জন্য ডিপিপিতে বরাদ্দ রাখা হয় ৩৮১ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্যাকেজটির দাপ্তরিক প্রাক্কলন করা হয় ৩৪৪ কোটি ৮৮ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। প্যাকেজটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এতে তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ৪০৩ কোটি ৬৮ লাখ ১০ হাজার ৪২৯ টাকা এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ৪৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৯০৭ টাকা দর উল্লেখ করে।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের সেপ্টম্বর মাসের প্রকিউরমেন্ট রেগুলেশন অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত দরপত্র দলিল অনুসারে কারিগরি ও আর্থিক বিড ওয়েটেজ যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ মূল্যমানের ভিত্তিতে যৌথ (কারিগরি ও আর্থিক) মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হয়। যৌথ মূল্যায়নে তমা কন্সট্রাকশন ৯৮.৫৭ নম্বর পেয়ে প্রথম এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ৯১.৭৭ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এতে বিশ্বব্যাংক সম্মতি দেয়।

কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এবং সম্মিলিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক সম্মতি দেয়। টিইসি কর্তৃক কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন ও পোস্ট কোয়লিফিকেশন সম্পন্ন করে সম্মিলিত মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নাম্বারপ্রাপ্ত এবং রেসপন্সিভ সর্বনিম্ন দরদাতা তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানির লিমিটেড (টিসিসিএল) মূল্যায়িত দর ২,৫৫,৭৮,৩৪১.৭১ মার্কিন ডলার ও ১৪৪.২৪,২৩,২৬৬.৮০ টাকা সমতুল্য ৪২৮ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ১৯৭ টাকা। যা দাপ্তরিক প্রাক্কলন থেকে ২৪.১৪ শতাংশ ঊর্ধ্বদর (২০১৯ সালের রেট অনুযায়ী)।

সূত্র জানায়, দরদাতার দাখিলকৃত দর ২০১৯-২০২০ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী ২৪.১৪ শতাংশ ঊর্ধ্বদর, ২০২২ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী ৫.৮২ শতাংশ ঊর্ধ্বদর এবং বর্তমান বাজার মূল্য হতে ১.৯৩ শতাংশ নিম্নদর। প্যাকেজটির কাজের চুক্তি ২৪.১৪ শতাংশ ঊর্ধ্বদরে সুপারিশের বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আলোচ্য প্যাকেজের মূল্যায়িত দর ৪২৮,১৬,১৯,১৯৭.০০ টাকা এবং দাপ্তরিক প্রাক্কলন ৩৪৪,৮৮,৩৯,৪৪৫.০০ টাকা এবং ডিপিপির সংস্থান ৩৮১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ডিপিপির সংস্থান থেকে (৪২৮,১৬,১৯,১৯৭০০-৩৮১,০৭,০০,০০০.০০) = ৪৭,০৯,১৯,১৯৭.০০ (৪৭ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ১৯৭) টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে। উক্ত অতিরিক্ত অর্থ ডিপিপিতে প্রাইস কন্টিজেন্সি খাতের ১৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকা থেকে ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।