জাতীয়

হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

কথাশিল্পী হ‍ুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন আজ।

একাধারে কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, গীতিকার হিসেবে সৃজনশীলতা ও মনোরঞ্জনের অতুলনীয় মেলবন্ধন ঘটিয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন হ‍ুমায়ূন আহমেদ। তুমুল জনপ্রিয়তায় তিনি এ দেশের মধ্যবিত্ত জীবনের বিচিত্র কথকতাকে সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন প্রায় পাঁচ দশক ধরে।

গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথাসহ তিন শতাধিক গ্রন্থে কথার জাদুর পাশাপাশি জন্ম দিয়েছেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী সব চরিত্রের। তার সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, শুভ্র, বাকের ভাই, রূপা চরিত্রগুলো পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। তার লেখা গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সরস রসবোধ, বিচিত্র জীবনভঙ্গি আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যে নতুন এক গতি দান করেছেন হ‍ুমায়ূন আহমেদ।

হাজারো পাঠক-দর্শক, ভক্ত-অনুরাগীর মন জয় করা এই কথাকার ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুরে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার এক ভাই কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অন্য ভাই আহসান হাবীব কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।

১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় হ‍ুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাঠক মহলে উপন্যাসটি এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে, এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৮০-৯০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রচনা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনিচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করলেও নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হ‍ুমায়ূন আহমেদ। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, চলচ্চিত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

হ‍ুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘নীল মানুষ’, ‘কবি’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখনো সমানতালে জনপ্রিয় হয়ে আছে। নাটকগুলোর আলোচিত সংলাপগুলো এখনো অনেকের মুখে শোনা যায়।

টেলিভিশন নাট্যকার হিসেবে হ‍ুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করেন নওয়াজিশ আলী খান। তার অনুপ্রেরণায় ১৯৮৩ সালে টেলিভিশনের জন্য লেখেন তার প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’।

গল্প-উপন্যাসের মতো এখানেও তিনি একের পর এক জনপ্রিয় কাজের জন্ম দিতে থাকেন। টেলিভিশন ও কথাসাহিত্যের সেই যুগপৎ মেলবন্ধনে বাংলাদেশের দর্শক-পাঠকদের তিনি এক বিস্ময়কর জাদুকরের মতো মুগ্ধতায় বুঁদ করে রেখেছিলেন পরবর্তী কয়েক দশক। একই জাদুতে তিনি বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা শিল্পে এক নতুন দিনের সূচনা করে দিয়েছিলেন। তার উপস্থিতিতে জাগ্রত হয়ে উঠত অমর একুশে বইমেলা।

হ‍ুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে নন্দিত এই কথাশিল্পীর মরদেহ দেশে আনার পর ২৪ জুলাই লেখককে তার প্রিয় নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

হ‍ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে টেলিভিশনগুলো সম্প্রচার করবে তার জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্রগুলো। এ ছাড়া সারা দেশে ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসায় আজ স্মরণ করা হবে প্রিয় কথাশিল্পীর জন্মদিনটিকে।