মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস্ রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক ড. সি আর আবরার।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রামরু আয়োজিত ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট: ক্ষতি মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘গত দশকব্যাপী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব বিরাজমান, যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি পরিবর্তিত হলেও মূল হোতারা একই রয়ে গেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে অভিবাসন প্রত্যাশী ও অভিবাসী কর্মীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা রোধে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’
অনুষ্ঠানে বক্তারা সিন্ডিকেটের প্রভাবে ক্ষতি মূল্যায়ন করেন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে করণীয় বিষয় নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিজ (বায়রা)-এর যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল ইসলাম জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা হলেও এমন সিন্ডিকেট অন্য কোথাও নেই।
তিনি বলেন, ‘‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে সাপোর্ট দেওয়ার পরিবর্তে প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিকদের খরচ বাড়াচ্ছে। এই সিন্ডিকেট শ্রমিকদের খরচ বাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি অ্যাজেন্সিগুলোর মধ্যে বৈষম্যও তৈরি করেছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার যদি যথাযথ মনিটরিং করে সরকারি তালিকা অনুযায়ী শ্রমিক পাঠায়, তবে দেড় লাখ টাকার মধ্যেই শ্রমিক প্রেরণ সম্ভব হবে।’’
বায়রার সদস্য মোস্তফা মাহমুদ বলেন, ‘‘২০২১ সালে মালয়েশিয়ায় রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলোর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়। যেখানে প্রায় ১০০ জন সরকারের সহযোগিতায় কাজ করছে।’’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি; বরং বৈষম্য আরও বেড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থে লাউঞ্জ উদ্বোধনের পরিবর্তে বিনা খরচে গমন ও ভিসা খরচ কমানো অনেক বেশি কার্যকর হতে পারত।’’
ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক জানান, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার পরই এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা উচিত ছিল। এই কমিশনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণের অনিয়ম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো। ভারত ও নেপালের মতো দেশ থেকে অনেক কম খরচে শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকেরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং এর ফলে অনেক পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তার মতে, সরকারকে দ্রুত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে লুটপাটের টাকা উদ্ধার করতে হবে।
হেলভেটাস বাংলাদেশ-এর প্রকল্প পরিচালক আবুল বাসার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষতির শিকার হওয়া শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সম্মান পুনরুদ্ধার ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় সরকারের উচিত যথাযথ দায়িত্ব পালন করা।
ড. সি আর আবরার জানান, এই সিন্ডিকেটের কারণে বহু পরিবার আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং অনেক শ্রমিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। কর্মী নিয়োগে সিন্ডিকেটের ফলে শ্রমিকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তার পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণের দাবির পাশাপাশি যে কোনও দ্বিপক্ষীয় সরকারি চুক্তি সম্পাদনে অধিকতর স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যেন এই সিন্ডিকেট আবারও চালু করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, অধিকারকর্মী, রিক্রুটিং অ্যাজেন্সির প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকবৃন্দ।