প্রশাসনের উপস্থিতিতে সমঝোতা অনুযায়ী রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের মারকাজ বুঝে নিয়েছেন তাবলিগের মাওলানা সাদপন্থি গ্রুপ। দুই সপ্তাহের জন্য তারা এখান থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
শুধু তাই নয়, সাদপন্থি লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে কাকরাইল মসজিদে আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র জুমা। জুমার নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে।
জুমার নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম মুফতি মুহাম্মদ আযীমুদ্দিন। এ সময় তিনি মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে আগামী সাত ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।
শুক্রবার সকাল ৮টার পর সাদপন্থীরা কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। কাকরাইল মারকাজ বুঝে নেওয়াকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সারাদেশ থেকে তাদের অনুসারি মুসল্লিরা আসতে থাকেন। সকাল দশটার মধ্যে কাকরাইল মসজিদ, মসজিদের বাইরে রাস্তাঘাট, আশেপাশে এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা রাস্তায় নামাজের জন্য বসে যান। সাদপন্থিদের ব্যাপক সমাগমে কাকরাইল মসজিদের আশপাশের রাস্তায় যানচলাচল সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে রমনা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার পথ এ সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র জুমার নামাজ। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নামাজ শুরু হয়ে সাড়ে ১২টায় শেষ হয়। নামাজ শেষে মোনাজাতের পর অবস্থান ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান মুসল্লিরা। ফলে ফাঁকা হতে শুরু করে কাকরাইল মসজিদসহ আশপাশের এলাকা।
এর আগে কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম মুফতি মুহাম্মদ আযীমুদ্দিন সাত ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে ইসলামী মহাসমাবেশ। এটি হবে সব থেকে বড় জমায়েত। দেশ-বিদেশের হযরতরা আসবেন সমাবেশে। আলোচনা হবে তাবলিগ জামায়াতের মেহনত ও সমসাময়িক বিষয়ে। এ সময় তিনি মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা, এবং তাদের নির্ধারিত ইজতেমা সফল করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না এবং কাকরাইল মারকাজে প্রবেশ করা নিয়ে জুবায়েরপন্থি তাবলিগের অপর অংশের বিরোধিতার এক পর্যায়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদারকিতে সমঝোতার পর আজ কাকরাইলের মারকাজে প্রবেশ করেন তাবলিগের সাদপন্থিরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাকরাইল মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা।
তিনি বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষই সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কাকরাইল মসজিদে চার সপ্তাহ থাকবেন জুবায়েরপন্থিরা আর দুই সপ্তাহ থাকবেন সাদপন্থিরা। সে অনুযায়ী সাদপন্থিরা আজ জমায়েত হয়েছেন।
আজ থেকে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য তারা কাকরাইল মসজিদে থাকবেন। কিন্তু সারা দেশ থেকে উলামায়ে-মাশায়েখরা এসেছেন, তাদের অধিকাংশই জুমার নামাজে অংশ নিতে এসেছেন। নামাজের পর চলে যাবেন। আর একটি অংশ মসজিদে থেকে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
সাদপন্থিদের ওপর হামলার কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, না, তেমন কোনো আশঙ্কা নেই। সকাল ৮টার সময় সাদপন্থিরা মসজিদে প্রবেশ করে আমাদের সামনেই জুবায়েরপন্থিদের কাছ থেকে রান্নার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে সব কিছু বুঝে নিয়েছেন। অপরপক্ষ কোলাকুলি করে বের হয়ে গেছেন। দুই সপ্তাহ পর তারা আবার আসবেন। আর এখন যারা থাকবেন তারা দুই সপ্তাহ পর বের হয়ে যাবেন। আমরা কোন ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা করছি না।
কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামাতের মধ্যে যে বিবাদ চলছে সম্প্রতি তা নতুন রূপ পেয়েছে। সাদপন্থিদের নিষেধাজ্ঞার দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটামও দিতে দেখা গেছে জুবায়েরপন্থিদের। এর মধ্যেই সাদপন্থিদের ব্যাপক জমায়েত দেখা গেল।
এর আগে গত ১২ নভেম্বর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠে সাদপন্থিদের প্রবেশের সুযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দেন জুবায়েরপন্থিরা।
৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন' থেকে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানান জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
তাদের এমন দাবি দাওয়ার মধ্যেই পরদিন সংবাদ সম্মেলন করেন সাদপন্থিরা। তারা যে কোনো মূল্যে মাওলানা সাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশে ইজতেমা করার অঙ্গীকার করে ‘মাওলানা সাদ কান্ধলভী’র ব্যাপারে যে সব অভিযোগ দেওয়া হয়ে সেসব অভিযোগকে অপবদা আখ্যা দিয়ে জুবায়েরপন্থিদের প্রকাশ্য বাহাসে বসার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এভাবে পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই জুবায়েরপন্থিরা কাকরাইল মারকাজ ছেড়ে গেলে সাদপন্থিরা শুক্রবার এটি বুঝে নেন।
২০১৯ সাল থেকে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টির মধ্যেই এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধও রাখা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে।
এবারও টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে দুই পর্বে। প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি।