জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে: প্রেস সচিব

কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে, এমনকি আরও কম হতে পারে। তবে বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা এ বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, কেউ কেউ লিখেছেন যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছর হবে’। প্রকৃত অর্থে তিনি এমন কথা বলেননি। অনেকে ভালোমতো না শুনেই একটা হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছেন। চার বছরের কথা কোথাও বলা হয়নি।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, সংবিধানের বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে, সেখানে বলা হচ্ছে সংসদের মেয়াদ চার বছরে আনা হোক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, এটা কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয় না। তখন ওনাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার ক্ষেত্রেও চার বছর কি না? তারপর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চার বছরের কম। এখানে চার বছরের কথা বলা হয়নি। আপনারা ভালোমতো শুনুন। আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকেই ভালোমতো না শুনে একটা হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছেন।’’

প্রেস সচিব বলেন, ‘‘কারও ডিমান্ড ছিল পার্লামেন্ট চার বছর হোক। সেই প্রসঙ্গে কথা এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে তা নিয়ে কথা হয়নি।’’

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে কোনো মাঠকর্মী নেই কেন, এনজিও কর্মী ও কিছু মুজিববাদী লোক কেন আছে? এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘জিমি আমির অনেকদিন সাংবাদিকতা করেছেন। মোস্তফা সবুজ মাঠের সাংবাদিক। যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের সলিড ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। মিডিয়া সংস্কারে তারা ভাল অবদান রাখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে ঢালাও মামলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘আমরা তো বলেছি ঢালাওভাবে মামলা যেন না দেওয়া হয়। তবে যে কেউ মামলা দিতেই পারেন। কিন্তু যার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই, সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে তাদের যেন বাদ দেওয়া হয়।’’

একই বিষয়ে প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, ‘‘কোনো ভুক্তভোগী যদি মামলা দেয় তাকে তো আমরা বলতে পারি না, আপনি মামলা দিয়েন না। তবে পুলিশকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দ্রুত তদন্ত করে মামলার নামে যাদের হয়রানি করা হচ্ছে তাদের বাদ দেওয়ার জন্য। যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, তাদের যেন দ্রুত বাদ দেওয়া হয়।’’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সরকার নেবে বলে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের অংশীজন। তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান হয়েছে সেটি সংশোধন হবে, নাকি কী হবে। সেটা ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বাংলাদেশে যত আদিবাসী কমিউনিটি আছে তাদের সবার সঙ্গে কথা হবে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের কনফিউশন দেখছি না।’’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বিএনপি আশাহত- এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন গঠন করা তো নির্বাচনি রোডম্যাপের অংশ।’’

সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিষয়ে নানা মহলের আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘‘সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কমিশনের প্রধানদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।’’

শফিকুল আলম বলেন, ‘‘গণমাধ্যমের যে কাঠামোগত পরিবর্তন আমরা চাচ্ছি তার জন্য ভালো একটা প্রতিবেদন ওনারা তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করি।’’

জেনেভায় আইন উপদেষ্টার নিরাপত্তার গাফিলতির বিষয়টি সরকার তদন্ত করছে বলে জানান অপূর্ব জাহাঙ্গীর। দায়িত্ব নেওয়া দুই উপদেষ্টার বিষয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ তাদের মতামত দিচ্ছে, আমরা দেখছি।’’

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘‘অনেক সমস্যা আছে যেগুলো একদিনে শেষ হয় না। তিতুমীর কলেজের ভাই-বোনদের বলব আপনারা শান্ত হোন। আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটার আশু সমাধান হবে।’’

দুই একটা কারখানা ছাড়া অন্য কোনো পোশাক কারখানায় অস্থিরতা নেই বলে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘‘তার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। গত মাসে ২১ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

সংবাদ সম্মেলন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘‘বিগত সরকারের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ হাজার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আমরা মনে করি না সংখ্যাটা খুব বেশি। গত সরকারের সময় অনেক দলীয় পরিচয়ের সাংবাদিককে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা এ কার্ডের অপব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদবিরসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বাতিল কার্ডধারী যদি মনে করেন তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে, তাদের আবার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তারা আবেদন করলে এবং সরকার যদি মনে তাদের যৌক্তিকভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।’’