জাতীয়

বেবিচক থেকে বাদ শহীদুল, দায়িত্বে হা‌বিবুর

দুর্নী‌তি মামলার চার্জ‌শিটভুক্ত আসা‌মি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আফ‌রোজ‌কে বাদ দি‌য়ে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) হাবিবুর রহমানকে এই পদে পদোন্নতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) হাবিবুর রহমান বে‌বিচকের প্রধান প্রকৌশলী হি‌সে‌বে আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে দা‌য়িত্ব গ্রহণ ক‌রেন। এ সময় তা‌কে বে‌বিচ‌কের প্রকৌশলীরা স্বাগত জানান। 

অভিযোগ রয়েছে, প‌তিত আওয়ামী লীগ সরকারের আম‌লের বৈষ‌ম্যের শিকার হ‌য়ে দীর্ঘ‌দিন প‌দোন্ন‌তি বঞ্চিত ছি‌লেন হাবিবুর রহমান।

জানা গে‌ছে, বে‌বিচ‌কের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল আফ‌রোজ দুর্নী‌তি মামলার আসা‌মি হওয়ার পরও প‌তিত সরকা‌রের সা‌বেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সা‌বেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর জোর সুপা‌রি‌শে ‘বরখাস্ত আদেশ’ প্রত‌্যাহার ক‌রে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প‌দে ফি‌রে আসেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব‌্যবহার ক‌রে সব বি‌ধি-বিধান ভে‌ঙে প্রধান প্রকৌশলীর পদ ভা‌গি‌য়ে নেন। 

শহীদুল আফ‌রো‌জের অনিয়ম-দুর্নী‌তি নি‌য়ে গত ৬ অক্টোবর রাইজিংবিডি ডটকম-এ ‘চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে শহীদুল’ শিরোনামে বি‌শেষ সংবাদ প্রকা‌শ হয়। 

সংবাদ প্রকা‌শের পরও তি‌নি ভোল পা‌ল্টি‌য়ে ‘তদ‌বি‌রের জো‌রে’ প্রধান প্রকৌশলীর প‌দে থাকার চেষ্টা করেন। এক পর্যা‌য়ে বে‌বিচ‌ক প্রকৌশলীদের আন্দোলন-আল্টিমেটামের মু‌খে প্রকা‌শিত সংবা‌দ আম‌লে নি‌য়ে বে‌বিচক গত বৃহস্প‌তিবার (২১ নভেম্বর) ডি‌পি‌সির সভায় শহীদুল আফ‌রোজ‌কে স‌রি‌য়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সভায় বে‌বিচ‌কের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দি‌য়ে প্রধান প্রকোশলীর দা‌য়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রধান প্রকৌশলী পদ থেকে শহীদুল আফ‌রোজ‌কে বাদ দি‌য়েছে বেবিচক

গত বৃহস্প‌তিবার জারিকৃত বে‌বিচ‌কের অফিস আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি)-এ কর্মরত মো. শহীদুল আফরোজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল)কে (স্মারক নম্বর: ৩০.৩১.০০০০.২০১.২৭.০০৯.২২-৫৭৮৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) অফিস আদেশে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব বাতিল করা হলো। তাকে চেয়ারম্যান, সিএএবি-এর দপ্তরে সংযুক্ত করা হলো।

একইদিন বে‌বিচ‌কের আরেক অফিস আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ১(ক) নং পদোন্নতি কমিটির সভার সুপারিশ মোতাবেক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী হি‌সে‌বে পদোন্নতি প্রদান করা হলো।

এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সাংবা‌দিক‌দের জানান, প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী পদে উন্নীত করা হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে থে‌কে যান দুর্নীতি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কুর্মিটোলার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহীদুল আফরোজ।

দুর্নীতির কারণে যেখানে তার সাসপেনশনে থাকার কথা, সেখানে সিভিল অ্যাভিয়েশনের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনিই ছি‌লেন সর্বেসর্বা। আওয়ামী লীগের ‘দলীয় লোক’ বিবেচনায় প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন ‘দুর্নীতিবাজ’ এই শহীদুল।

জানা গেছে, পতিত সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিমান পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের তদবিরের জোরে জনপ্রশাসনের রুটিন/চলতি দায়িত্ব প্রদানের শর্ত ভঙ্গ করে তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও তদবিরের জোরে মানবিক কোটায় ‘তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর’ পদে ফিরে আসেন বিতর্কিত এই শহীদুল। সরকার পতনের ছয় মাস আগে ভাগিয়ে নেন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার প্রধান প্রকৌশলীর পদটিও। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বেবিচক ও সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী দুর্নীতি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেখানে তার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, সেখানে সাবেক আইনমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ লোক’ হওয়ায় তারই নির্দেশে তারই মন্ত্রণালয়ের ‘আইনি মতামত’ দেখিয়ে তার মত চার্জশিটভুক্ত আসামির বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে পূর্বের পদে বহাল করা হয়।

শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে তাকে সরকারি শর্ত ভঙ্গ করে সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী (সিনিয়র) পদে ৬ মাসের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর তার নিয়োগের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ বাড়াতে হলে বোর্ডের অনুমতি লাগবে কিন্তু শহীদুলের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমতি প্রয়োজন হয়নি। এভাবেই তিনি পদে পদে সকল সরকারি আইনকানুন ও বিধি লঙ্ঘনের রেকর্ড গড়েছেন। বিতর্কিত শহীদুলকে এই পদে বসাতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির নজিরও স্থাপন করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ।