২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্রয় এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকারের যেসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে; সেগুলো পর্যালোচনায় সহায়তার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় রিভিউ কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি খ্যাতনামা আইনি ও তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।
পর্যালোচনা কমিটি যে বড় কয়েকটি চুক্তির তদন্ত করছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর (গোড্ডা) বিআইএফপিসিএল ১২৩৪.৪ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনোমিক টাইমস জানিয়েছে, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারকে এই পরামর্শ দেয়। একইসাথে তারা বিশেষ প্রস্তাবে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ক্রয়ে আহ্বানকৃত ও অনাহ্বানকৃত চুক্তিগুলোর বিস্তারিত রিভিউ করার জন্য তাদের আরো সময়ের প্রয়োজন।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এমন সব প্রমাণ সংগ্রহ করছেন, যা আন্তর্জাতিক সালিশি আইন ও কার্যক্রম অনুযায়ী চুক্তিগুলোর বিষয়ে পুনরায় আলোচনা বা বাতিল করার সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রস্তাবে বলা হয়, ‘‘আমাদের কাজ সহজতর করা এবং আমাদের কমিটিকে সহায়তার জন্য এক বা একাধিক শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক আইনি ও তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানকে অবিলম্বে নিয়োগ করার সুপারিশ করছি।’’
পর্যালোচনা কমিটি বর্তমানে বেশ কিছু চুক্তির বিস্তারিত তদন্তে কাজ করছে। এর মধ্যে আদানি ছাড়াও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেঘনাঘাট ৩৩৫ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানি (তরল জ্বালানি ও গ্যাস) বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ১৯৫ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালী ৬১২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানি (তরল জ্বালানি ও গ্যাস) বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট গ্যাস/আরএলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরো পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে বলেছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।
আদানি গ্রুপ অবশ্য সম্প্রতি তার বকেয়া ৮০ কোটি ডলার পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ডলার সংকট সত্ত্বেও তারা ১৫ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে এবং সম্পূর্ণ পরিশোধ করার আশা করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস
সম্প্রতি দেশীয় গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জানান, আদানি বাংলাদেশের পাওনাদার। সেজন্য পাওনা শোধ করা হয়েছে। তা না হলে দেশের গোটা বিদ্যুৎ খাত সমস্যায় পড়ে যাবে। তবে পুরো টাকা দেওয়া হয়নি। ভাগ ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। যেটা বাংলাদেশ নিয়ে ফেলেছে, সেটার জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য রিভিউ হবে।
আদানির গোড্ডা থার্মাল প্ল্যান্টটি একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ইউনিট প্রতি বিল অনেক বেশি ধরা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই ভারত সরকার আইন পরিবর্তন করে দেশীয় বাজারে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি করার অনুমতি দেয়।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৭ সালে আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ঢাকার। ঠিক হয়, ঝাড়খণ্ডে আদানিদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎই কিনবে তারা। কিন্তু আদানিরা যে টাকায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে, তা অন্য সংস্থার থেকে অনেকটাই চড়া বলে অভিযোগ। ভারতের অন্যান্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ইউনিটপ্রতি গড়ে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা (বাংলাদেশি মুদ্রায়) দরে বিদ্যুৎ কিনলেও, আদানিদের কাছ থেকে ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতেই আদানিদের থেকে চড়া দামে হাসিনা বিদ্যুৎ কিনতে রাজি হন বলেও রয়েছে অভিযোগ।
এমনকি বকেয়া নিয়েও হাজারো অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, আদানিরা যেখানে ৯৬ ডলার করে দাম ধরছে, সেখানে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দর ধরছে ৭৫ ডলার। বকেয়া মেটাতে দেরি হলে আদানিরা ১৫ শতাংশ হারে সুদ নিলেও, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সুদ নিচ্ছে না। ফলে একতরফাভাবে আদানিরা এই চুক্তির বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ভারতেও। ঝাড়খণ্ডের গোন্ডায় আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার উপর নির্ভর করে। বিদেশ থেকে আনা কয়লায় শুল্কছাড় থেকে, যন্ত্রপাতির উপর জিটিএস ছাড়, আদানিদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। এমনকি পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে যে কর দিতে হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে, আদানিদের ক্ষেত্রে তা মাফ করে দেওয়া হয় বলেও জানা যায়।
ঝাড়খণ্ডে ওই কয়লা খনি নির্মাণের জন্য যেভাবে জমি নেওয়া হয়, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিদেশে রপ্তানি করতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ হলেও, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো আইন সংশোধন করে আদানিদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরজা ভারতীয় বাজারে খুলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।
আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক!
ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘‘আদানির সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। ঠিক এরপরের দিনই গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আদানি ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে হওয়া জ্বালানি চুক্তি প্রথম থেকেই বিতর্কিত ছিল। কারণ হাসিনার আমলে হওয়া অন্য চুক্তির মতো এটিও কোনো টেন্ডার ছাড়া হয়। তা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার আদানির প্রতি ইতিবাচক পদক্ষেপ ও আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগের পর, আলোচনার জায়গা খুব সম্ভবত কমে যাবে। ফলে বিদ্যুতের দাম পুননির্ধারণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র চাপে পড়বে আদানি গ্রুপ।’’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছিল দ্য হিন্দু। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, জি২জি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন তারা। কিন্তু আদানির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে তারা প্রয়োজন না হলে হস্তক্ষেপ করবেন না।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এই কেন্দ্রটি বানানো হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য।
বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ বলেন, ‘‘আদানি বাংলাদেশকে চুক্তির প্রস্তাবে জানায় তারা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা এনে সেগুলো দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে বাংলাদেশে পাঠাবে। যেহেতু বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নেই তাই বিষয়টির যৌক্তিকতা ছিল। তবে সমালোচকরা পরবর্তীকালে বলতে শুরু করেন, আদানি তো ভারতের সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পেয়েছে। কিন্তু এই ভর্তুকি তো বাংলাদেশের সঙ্গে তারা ভাগাভাগি করেনি।’’
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আদানির কাছে বিদ্যুতের দাম পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য একটি চিঠি দেয়। ওই সময় আদানি জানায় তারা প্রতি মেট্রিক টন কয়লা ৪০০ ডলারে কিনছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তারা অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে একই পণ্যের জন্য ২৫০ ডলারের কম দিচ্ছে।
গৌতম আদানি
দেশে দেশে চাপে আদানি
আদানি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। দেশে দেশে রয়েছে ভীষণ চাপে। এরই মধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা দু’টি চুক্তি বাতিল করেছে কেনিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিপুল অঙ্কের ঘুষকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নিউ ইয়র্কের গ্রান্ড জুরি।
ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় আদানির কয়লা খনিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশে আদানির চুক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়েও এখন কাঠগড়ায় আদানি গ্রুপ। এ অবস্থায় কী করবে বাংলাদেশ?
অন্যদিকে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে এ চুক্তি নিয়ে একটি রিট করা হয়েছে। আদালত রুলসহ একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। রুলে অসম, অন্যায্য ও দেশের স্বার্থ পরিপন্থি দাবি করে চুক্তিটি কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
শুধু তাই নয়, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে আদানিকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ঘুষকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই শিল্পপতি গৌতম আদানিকে গ্রেপ্তার করার দাবিতে সরব হলেন কংগ্রেস, শিবসেনা, আপ-এর শীর্ষ নেতারা।
এ ছাড়া ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও আদানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আদানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত।
রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। নিউ ইয়র্কের আদালতে ঘুষকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদানি ও তার ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান তিনি। ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর দেওয়া নতুন তথ্যের ভিত্তিতে চুক্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। যদি দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আসে, আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না।’’
তার এই বক্তব্যে কেনিয়ার সংসদ সদস্যরাও সায় দিয়েছে। কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশটির সঙ্গে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের চুক্তি ছিল আদানি গ্রুপের। পাশাপাশি জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন রুটো। কেনিয়ার তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নতুন তথ্যের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুটো।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযুক্ত আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও চলছে টানাপড়েন। কয়েকদিন আগে আদানির সঙ্গে দেশের ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুক্তির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। ওই নির্দেশের এক দিন পরেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন আদানি এবং তার কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও চাপে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আদানি গ্রুপের চুক্তিটি শুরু থেকেই বেশ বিতর্কিত ছিল। কেননা, হাসিনা সরকার স্বাভাবিক নিয়ম মেনে এই চুক্তি করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপরেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক ধারায় আগানোর চেষ্টা করেছে।
তবে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিটি বর্তমানে অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে জি-টু-জি চুক্তির অধীনে ভারত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আদানির ২০১৭ সালের বিদ্যুৎ চুক্তি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই কয়লা, বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো যাচাইয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সংলাপের পথে হাঁটলেও মার্কিন মুল্লুকের খবরের পর তার বাঁকবদল হতে পারে। কার্যত চাপে পড়তে পারে আদানি ও তার প্রতিষ্ঠান।
গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়াতেও চাপে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। সেখানে তার কয়লা খনির কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি সপ্তাতেই এই অভিযোগের কবলে পড়েছে আদানির প্রতিষ্ঠান। কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের নাগানা ইয়ারবাইন ওয়াঙ্গান অ্যান্ড জাগালিংগু কালচারাল কাস্টোডিয়ানস জানিয়েছে, ব্রাভাস মাইনিং অ্যান্ড রিসোর্সেস ইউনিটের বিরুদ্ধে গুরুতর বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এনে তারা এ সপ্তাহের শুরুতে অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আদানির কর্মীরা আদানির কারমাইকেল কয়লা খনির কাছে আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্নভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। নাগানা ইয়ারবাইনের সিনিয়র কালচারাল কাস্টোডিয়ান আদ্রিয়ান বুরাগুব্বা এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে আদানির কাছ থেকে বৈষম্য সহ্য করেছি, আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
তারা বলেন, ‘‘গত বছর আমাদের আইনজীবীরা আদানির কর্মীদের তাদের উদ্বেগজনক আচরণের জন্য নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও তারা এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছেন।’’ এক্ষেত্রে আইনি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন তারা।
তবে এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে আদানি ইস্যুতে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না। যেহেতু আদানি নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ লোকদের একজন। এক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা আদানির বিষয়ে অবগত রয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন পিয়ের বলেন, ‘‘স্পষ্টতই আমরা আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে সচেতন। এক্ষেত্রে বাকি কিছু জানতে হলে সবাইকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বিচার বিভাগের কাছে যেতে হবে।’’ জিন পিয়েরে যোগ করেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সম্পর্ক আমাদের জনগণের। বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে আমরা উভয়ই একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছি।’’