জাতীয়

সাধারণ জনগণের শক্তি ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত ‘আমিও জিততে চাই’

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। এতে তরুণ-তরুণীরা তুলে ধরছেন তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা।

‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের রংপুরের তরুণ শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছেন বেশ কিছু সমস্যা।

একজন শিক্ষার্থী দাবি করেন, সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর খেলার মাঠ কমে গিয়েছে। তিনি চান, খেলার মাঠ যেন বৃদ্ধি করা হয়। অন্য এক শিক্ষার্থী, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী খাল ‘শ্যামাসুন্দরী’ কে দখল্মুক্ত করার দাবি জানান। এরকম আরও অনেক দাবি উঠে এসেছে তরুণদের এই মিলনমেলায়।

শুধুমাত্র রংপুর নয় দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলমান ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থী, গার্মেন্টসকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বগুড়া, খুলনা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান এই সব ক্যাম্পেইনের কারণে মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। যেসব দাবি আজ পর্যন্ত কাউকে বলতে পারেননি, সমাজের ভয়ে, চাকরি হারানোর ভয়ে কিংবা রাজনৈতিক চাপের কারণে, সেসব কথাগুলো উঠে এসেছে মানুষের কণ্ঠে। ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায়, মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে পারেন, যা সাধারণত সরকারি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না।

রংপুরের সম্ভাবনার আলোচনায় উঠে এসেছে তরুণদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। বক্তারা বলেন, "অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং তরুণদের বৈশ্বিক কাজের জগতে প্রবেশ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।’ ওডেস্ক, ফাইভার, আপওয়ার্কের মতো প্ল্যাটফর্মে কাজ করে অনেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করছেন।

রংপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাগফুর হোসেন রিপন বলেন, ‘"ইন্টারনেট ও মুঠোফোন ব্যবহার করে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন করে তাদের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে।কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। ‘আমিও জিততে চাই' ক্যাম্পেইন তরুণদের লক্ষ্য ও চাওয়াকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার উদ্যোগ।’’

রংপুর সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম সেতু বলেন, “বেকারত্ব দূর করতে একাডেমিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়; কারিগরি দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য।”

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৬-৭ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের একটি বড় অংশ ফ্রিল্যান্সিং থেকে বার্ষিক ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স আয় করছে। এটি তাদের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ানোর অনুপ্রেরণা হতে পারে।

তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের এই উদ্যোগ শুধু কর্মসংস্থান নয়, বরং রংপুরকে বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। দেশজুড়ে চলমান ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে নীতি আলোচনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে ইন্টারেকটিভ থিয়েটার পারফর্ম্যান্স, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চনাটকে সুক্ষ্ম হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি এবং দাবি তুলে ধরা হয়। আর এসব কিছুর শুরুতেই ছিল ‘আমিও জিততে চাই’ স্লোগান। এটি অনলাইনে সরাসরি পোস্ট করার একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ‘amiojittechai.com’ ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ নিজের দাবি প্রকাশ করতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের এলাকার সমস্যাগুলো ছবি, ভিডিও কিংবা ব্লগ লেখার মাধ্যমে খুব সহজেই তুলে ধরতে পারেন-যেনো এটি শুধু তাদের অভিযোগ না থেকে সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগে।

“আমিও জিততে চাই” কেবল মানুষের ব্যক্তিগত কষ্ট প্রকাশের জন্য নয়, বরং এটি সামাজিক পরিবর্তনের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হলো দেশের প্রান্তিক জনগণের কণ্ঠস্বর শোনা এবং প্রশাসনের নজরে আনা। প্রতিটি পোস্টে সহমর্মী মানুষেরা মন্তব্য করেন এবং সমর্থন জানান, যা সমস্যাগুলোকে প্রশাসনের কাছে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার জন্য সহায়ক।

দেশজুড়ে চলমান এই ক্যাম্পেইনে উঠে এসেছে ইভটিজিং, ট্রাফিক জ্যাম সংকট, নারীদের কর্ম অনিরাপত্তা, শ্রমিকদের সঠিক বেতন ভাতা না পাওয়া, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য, রাজনৈতিক অসঙ্গতিসহ সমাজের নানা সমস্যার কথা।