বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী ১০০ নারীর যে তালিকা বিবিসি প্রকাশ করেছে এবার, তাতে স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু।
বিবিসি তার পরিচয়ে বলেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন রিক্তা বানু। সেখানে তিনি ‘রিক্তা আক্তার বানু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ নামে অটিস্টিক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি স্কুল গড়ে তুলেছেন।
মঙ্গলবার ১০০ নারীর সচিত্র প্রতিবেদনসহ তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি।
রাইজিংবিডি ডটকমের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স রিক্তা বানু এই উপজেলায় ২০০৯ সালে নিজ নামে বিদ্যালয়টি গড়ে তোলেন। যেখানে এখন প্রায় ৩০০ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষাগ্রহণ করছে।
বিবিসির বর্ণনা অনুযায়ী, রিক্তা বানুর ওই এলাকায় অটিজমকে ‘অভিশাপ’ হিসেবে দেখা হয়।
মূলত সামাজিক এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে হার না মানা লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকায় তার নাম রাখা হয়েছে।
জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি- এই পাঁচটি বিভাগে (ক্যাটাগরি) ১০০ জন নারীকে বাছাই করেছে বিবিসি।
কুড়িগ্রামের রিক্তা আক্তার বানু স্থান পেয়েছেন বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে।
২০২৪ সালে বিবিসি যে ১০০ নারীর তালিকা করেছে, সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ, নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস, ধর্ষণের শিকার হওয়া জিসেল পেলিকট, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিক অ্যাথলেট রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, গায়িকা রে, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমিন, জলবায়ুকর্মী আদেনিকে ওলাদোসু, লেখক ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা।
রিক্তা আক্তার বানু কার্যক্রমের বর্ণনায় বিবিসি লিখেছে, তার মেয়ে অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। মেয়েটি সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত।
তার লড়াই সম্পর্কে বিবিসির বর্ণনায় বলা হয়েছে, তার এই মেয়েকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েটিকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়।
নিজের অটিস্টিক এবং সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত কন্যাকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারেননি বলে তিনি নিজের জমি বিক্রি করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
রিক্তা আক্তার বানুর লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি স্কুলে এখন ৩০০ শিক্ষার্থী আছে। স্কুলটি প্রতিবন্ধিতার বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
স্কুলটি প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও এখন এটি বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদের জন্যও সেবা প্রদান করে।