জাতীয়

সম্পর্কের ‘মেঘ’ দূর করতে বাংলাদেশ-ভারত আগ্রহী 

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মাঝে মেঘ এসেছে, দুই পক্ষই তা দূর করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরো জোরদার করতে ভারত আগ্রহী।’’ 

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিকেলে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। এর আগে দুপুরে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ১৯ কূটনীতিক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। দুটো বৈঠকের বিষয়ে যমুনার গেটে ব্রিফ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রের বৈঠকের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে এবং আরো জোরদার করতে আগ্রহী। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ভারত মনিটর করেছে, দেখেছেন ও অবগত। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সার্ককে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চাই। আমরা যে একসঙ্গে বিমসটেকে আছি, সেটাও বলেছি। আমাদের বিষয়ে বিভিন্ন যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সেটার বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।’’

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যে শঙ্কার কথা বলেছেন এবং অপপ্রচারের জবাব বাংলাদেশ কীভাবে দিয়েছে—এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘প্রোপাগান্ডার জবাব লিখিত ও মৌখিক বহুভাবে বলেছি। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িক দেখানোর সুযোগ কম। সেগুলো ব্যক্তিগত এবং বেশির ভাগ রাজনৈতিক।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার এটার অংশ না এবং কোনো ঘটনা বরদাশত করছে না, অভিযোগ আসলে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ভারতীয় সচিবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যে মেঘ এসেছে, এ মেঘটা দূর করতে হবে। আমরাও বলেছি এ মেঘটা দূর করতে হবে।

‘‘একই সঙ্গে দুই পক্ষ একমত হয়েছি, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলার মাধ্যমে একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ আমাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এগুলোর বিষয়ে তাদের বক্তব্য হচ্ছে ভারতীয় সরকার কোনোভাবে দায়ী না। সরকার এগুলো করছে না, ‘ওন’ও করছে না। এগুলো মিডিয়া ও সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।’’

ভিসার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ তারা গ্রহণ করবে।’’

বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে হামলার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে—সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘উপহাইকমিশনে সহিংস আচরণের বিষয়ে আমরা আগেই প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।

‘‘আজকে যেহেতু তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও জোরদার করার কথা বলছেন, তাই আমরা ধরেই নেব সেই ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশের অবস্থানে তারা এখনো আছে। নতুন করে এটা বলা হয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা স্পষ্ট অবস্থান বলেছি, নির্বাচন অবাধ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে এবং একটা গণতান্ত্রিক দেশের দিকে যাত্রা শুরুর জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে সকলেই আমাদের পাশে থাকবে। সহায়তা করবে এবং একসঙ্গে কাজ করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।’’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের ১৯ কূটনীতিকের ফটোসেশন

ইইউভুক্ত দেশের ১৯ কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠককে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কেবল বাংলাদেশে যেসব ইউরোপীয় দূতাবাস রয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু আজকের বৈঠকে দিল্লিতে আছেন এমন রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি। যে ইইউ একটি ইউনিয়ন হিসেবে এত রাষ্ট্রদূত, প্রতিনিধি কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন। নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় এটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি।’’

বৈঠকে দুই পক্ষ কথা বলেছেন জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটাবে সে জন্য ইইউ থেকে বাণিজ্য সুবিধা তাদের মার্কেটে প্রাপ্তির ব্যাপারে কথা বলেছি। জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়ে কথা বলেছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের কাছে মানবাধিকারের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। উত্তরে আমরা বলেছি প্রত্যেকটা বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশ্যই একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে যাব।’’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘আইসিটি আদালতের কথা জানিয়েছি। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন কোন কোন ক্ষেত্রে কী পদ্ধতিতে কাজ করছে, তা জানিয়েছি। শ্রম অধিকার নিয়ে ইইউকে বলেছি সেখানে একটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে আর সস্তা শ্রমের দেশ শুনতে না হয়, বরং শ্রমিক স্বার্থ সুসংহত থাকে সেটা কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।

‘‘ইইউভুক্ত অনেক দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে দিল্লিতে যেতে হয়। এটা অনেক সময় ঝামেলা হয়ে যায়। তাদের কাছে সুস্পষ্ট অনুরোধ ছিল তারা যেন ভিসা সেন্টারগুলো দিল্লি থেকে অন্যত্র স্থাপন করে।’’

বাংলাদেশ নিয়ে ক্রমাগত অপপ্রচারের বিষয়ে ইইউকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘কেন জুলাইয়ে বিপ্লব হলো, তার আকাঙ্ক্ষা কী? সেটাকে ধারণ করে বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা হচ্ছে, সেটা জানানো হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে।’’