জাতীয়

সান ইয়ুথ নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু

পুষ্টি উন্নয়নে ৫০ হাজারেরও অধিক তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতার  লক্ষ্যে ‘সান ইয়ুথ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এই নেটওয়ার্কের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, একই মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশীদ, জনস্বাস্থ্য উইং এর অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সান ফোকাল হেলথ সার্ভিসেস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি।

অনুষ্ঠানটির আয়োজক হিসেবে ছিল সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রোভড নিউট্রিশন (গেইন)।

অনুষ্ঠানে সান ইয়ুথ নেটওয়ার্ক বালাদেশ এর কার্যক্রমের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন গেইন-এর প্রকল্প সমন্বয়কারী মেহেদি হাসান বাপ্পি।

চলতি বছরের ১ নভেম্বর স্কেলিং আপ নিউট্রিশন বাংলাদেশ   এর সচিবালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সান ইয়ুথ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ চালুর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন বাংলাদেশের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে তরুণদের সম্পৃক্ততার নতুন মাত্রা লাভ করেছে।

এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের অপুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করবে এবং অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের ব্যাপকমাত্রায় অংশগ্রহণ বাড়বে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার কৌশলের সাথে সমন্বয় ও পুষ্টি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন,‘‘পুষ্টি বিষয়ক টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তরুণরা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের কাছে বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে পারে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সান ফোকাল ও হেলথ সার্ভিসেস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব মোমেনা মনি বলেন, ‘‘এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কীভাবে পুষ্টি উন্নয়নে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানো যায় তরুণরা তা শিখতে পারবে। একই সঙ্গে নেটওয়ার্কটি টেকসই পুষ্টি উন্নয়ন ও খাদ্য নীতিমালা ও পদ্ধতি গড়ে তোলার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ বলেন, সান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি যুবদেরকে পুষ্টির ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।

গেইন-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর, ডা. রুদাবা খন্দকার তার বক্তব্যে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি প্রচারে উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার তাগিদ দেন।

অনুষ্ঠানে সান ইয়ুথ নেটওয়ার্ক উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে কয়েকজন তরুণ তাদের উদ্ভাবন বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

এই কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সান ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সচিবালয় হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রোভড নিউট্রিশন (গেইন)। বিভিন্ন যুব সংগঠন, ক্লাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সংযুক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন অংশীদার এবং সান মুভমেন্ট এর অন্য সদস্যগুলো গেইন এর সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ ৪০টি জেলায় খাদ্য ব্যবস্থা এবং পুষ্টি জ্ঞান ও দক্ষতার বিষয়ে যুব ও কিশোর-কিশোরীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ কমিউনিটি পর্যায়ে যৌথ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এতে পুষ্টি উন্নয়নে সচেতনতার পাশাপাশি এই নিয়ে সক্ষমতা তৈরি হবে, যা টেকসই লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২২ অনুসারে, বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় খর্বকায় শিশুদের হার ২৪ শতাংশ, শহরাঞ্চলে, ২২ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে ২৪ শতাংশ। এছাড়া কম ওজনের শিশূদের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় ২২.৮ শতাংশ, শহরাঞ্চলে ২১ শতাংশ এবং জাতীয়ভাবে ২২ শতাংশ বিদ্যমান।

এই ধরনের উদ্যোগ ব্যাপকসংখ্যক তরুণদের পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে পুষ্টি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও অপুষ্টি দূর করতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে পুষ্টি সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।