চার দিনের সফরে আগামী ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছেন পূর্ব তিমুরের (তিমুর লেস্তে) প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস হোর্তা। এই সরকারি সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। হোসে রামোস হোর্তার ঢাকা সফর বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সচিব বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আগামী ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর হোসে রামোস হোর্তা বাংলাদেশ সফর করবেন। এটি বাংলাদেশে তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের প্রথম সরকারি সফর হবে। সফরকালে তিনি আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির মুখ্য উপদেষ্টাসহ উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন।”
তিনি বলেন, “তিমুর লেস্তের স্বাধীনতা লাভের পরপরই ২০০২ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তিমুর লেস্তের স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিমুর লেস্তে আজও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে।“
তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতি হোসে রামোস হোর্তাকে যথাযথ মর্যাদায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সফরের প্রথম দিন (১৫ ডিসেম্বর) তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এর পরপরই দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হবে। ওই দিন রাতে তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতি তার সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। ১৬ ডিসেম্বর তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তিনি বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। পরদিন (১৭ ডিসেম্বর) তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত পাবলিক লেকচারে ‘সমসাময়িক বিশ্বে শান্তির চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। একই দিন বিকেলে তিনি বাংলাদেশের ছাত্র এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে তার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, তার নেতৃত্ব, দীর্ঘ সংগ্রামে জনগণের ভূমিকা ও স্বাধীনতা-পরবর্তী তিমুর লেস্তের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে বলবেন। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পটভূমিতে তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রনায়কের সান্নিধ্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীন ও বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় সঞ্চারিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিমুর লেস্তের রাষ্ট্রপতির এই সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। এর মধ্যে রয়েছে অফিসিয়াল ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি চুক্তি এবং দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
এ সফরকালে বাংলাদেশে তিমুর লেস্তের অনারারি কনস্যুলেট খোলার বিষয়েও ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান পরিষেবা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষা, পেশাদার ও কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) এবং ক্ষুদ্র অর্থ ও ক্ষুদ্রঋণসহ দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ ও তিমুর লেস্তের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগতিার ক্ষেত্র হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি, কন্টাক্ট ফার্মিং, প্রাণিসম্পদ ও প্রাণী চিকিৎসা, গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার, তথ্য প্রযুক্তি, র্পযটন, তিমুর লেস্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সুযোগ-সুবিধা ও স্থায়ী রেসিডেন্স কার্ড প্রদান এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থী বিনিময়, শিক্ষক বিনিময়, যৌথ গবষেণা প্রকল্প এবং যৌথ মাস্টার্স এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার আদান-প্রদানে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।”
এই সফরকালে জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়সমূহ গুরুত্বের সাথে আলোচিত হবে। আশা করা হচ্ছে, তিমুর লেস্তে আগামী ২০২৫-২৬ এর মধ্যে আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করবে। ফলে, ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিমুর লেস্তের দৃঢ় সমর্থন ও আসিয়ান জোটে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানোর সুযোগ হবে বলেও সচিব জানিয়েছেন।