মহান বিজয় দিবসে ১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল ঢাকা জেলা প্রশাসন।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়। প্রথমে ফুল দিয়ে আমন্ত্রণ এবং পরে প্রাইজ মানি তুলে দিয়ে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ প্রধান অতিথি ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা যে উদ্দেশ্য যুদ্ধ করেছে, যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সমাজটা সুন্দর হবে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, সমস্ত অন্যায় খতম হবে, কেউ কারো প্রতি অন্যায় করবে না। সমাজে আইনের শাসন থাকবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করবে। মিলে মিশে বসবাস করবে। তাদের সে চেতনা পূরণ হয়নি। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা বাস্তবায়নে অনেক কাজ আমাদের বাকী রয়েছে। আজ এতো বছর পরও আমাদের শুনতে হচ্ছে, দ্রব্য মূল্য কেন আকাশ ছোঁয়া। সিন্ডিকেটের হাতে কেন সব কিছু জিম্মি। আইন শৃঙ্খলা অবস্থা কেন ভালো না। রাস্তাঘাটে কেন যানজট। এ সমস্যাগুলো দূর করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন।”
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, “পৃথিবীর যত পরিবর্তন, যত ইতিহাস সবকিছুতেই ছাত্ররা জড়িত। জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্ররা জেগে উঠে বিজয় এনে দিয়েছে। গুম, খুন সব কিছুই জন্য তারা লড়াই করেছে। রক্তচক্ষুর বাইরে থেকে আপনারাও যুদ্ধে নেমেছিলেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আপনারা সজাগ হন। নতুন প্রজন্মকে সামনে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেব।”
সংবর্ধনা নিতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বলেন, “একাত্তরে কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই দিনগুলোতে যদি সাধারণ জনগণ, ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হয়ে যেত। স্বাধীনতা পাওয়ার ৫৩ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছি। আবার অনেক কিছু করতে পারেনি। তবে যা অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। তা না হলে যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে তারা শান্তি পাবে না। এই দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। এই দেশটা কলুষিত করে ফেললে আমরাই খারাপ থাকব। আমাদের অতিলোভ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফা হাসিন রোজী বলেন, “শুধু কয়েকজন যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা পায়নি। এই সাড়ে সাত কোটি মানুষ যোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গত ৫৩ বছর ধরে কোনো না কোনোভাবে আমরা স্বৈরাচারের শিকার হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কখনোই শেষ হয় না। যেকোনো ফরম্যাটে চলতে থাকে। আমরা শোষণহীন দেশ প্রত্যাশা করছি।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. ফুয়ারা খাতুন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান ও সহকারী কমিশনার নুসরাত নওশীন সঞ্চালনায় স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন।