লাখো মুসল্লির কান্নায় ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনীতে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিন দিনের ইজতেমা। শেষ দিনে মুসল্লির ঢল নামে। সুবিশাল প্যান্ডেলের ভিতরে-বাইরে মুসল্লির উপস্থিতি ছাড়িয়ে যায় রাস্তায়।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় আখেরি মোনাজাত। মুসল্লিরা রবের প্রার্থনায় দুই হাত তুলে কান্নায় আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এ সময় ‘আমিন আমিন ধ্বনী’তে ইজতেমা ময়দানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ইসলামের জীবন বিধান মেনে সারাবিশ্বে নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দিতে মহান রবের সাহায্য কামনা করা হয়। দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি, বিশেষ করে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত কামনা করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর সভাপতি (নীগরান) মাওলানা আব্দুল মোবিন আত্তারি।
শেষ দিন শনিবার সকাল থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা কোরান-হাদিসের আলোকে ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বয়ান করেন। তার মধ্যে ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান, নামাজের গুরুত্ব ও বেনামাজির শাস্তি, আজান-ইকামত ও নামাজ পড়ার নিয়ম-পদ্ধতি, মা-বাবার প্রতি সন্তানের হক, জুলুম-অত্যাচারের পরিণতি, নামাজের গুরুত্ব ও বেনামাজির ভয়াবহ পরিণতি, ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন হাদিসের আলোকে জীবন গড়া, মৃত্যু, কবর ও হাশরের প্রস্তুতি ইত্যাদি। এসব বয়ানের ফাঁকে ফাঁকে চলে হামদ ও নাতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা এবং দোয়া মোনাজাত।
শেষ দিনের ইজতেমায় ধারাবাহিকভাবে এসব বিষয় তুলে ধরে বয়ান করেন দাওয়াতে ইসলামীর মোবাল্লিগ কাওসার আত্তারী, মাওলানা ইয়াসিন আত্তারী, মাওলানা শাহরুখ আত্তারী মাদানী প্রমুখ।
আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিঃশর্ত অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা বলেন, ‘‘আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ অনুসরণেই মানবতার মুক্তির সনদ নিহিত। ইসলামের জীবন-বিধান মেনে চলা গেলে এবং প্রিয় রাসুলের সুন্নাতের রঙ্গে রাঙায়িত হয়ে মোত্তাকি হতে পারলেই আপনার দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তি মিলবে। আর প্রিয় হাবিবের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসাই ঈমানের পূর্বশর্ত। আল্লাহ পাক ও তার প্রিয় রাসূলের সৃষ্টির জন্যই হতে হবে আমাদের নিয়্যত, চিন্তাধারা, কর্মকাণ্ড সবকিছুই।’’
বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইসলামে নেকীর দাওয়াত পৌঁছে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
শরীয়ত মতে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়ে তারা আরো বলেন, ‘‘আল্লাহ পাক ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামাজ আদায় করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই নামাজ পড়তে হবে। নামাজেই যত প্রশান্তি। লোক দেখানো নামাজে হবে না। বরং শেষ বিচারে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ, রয়েছে কঠিন শাস্তি। সন্তানকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে হবে। সুসন্তানের আমল নিজের জন্য তো বটে, তার মা-বাবার জন্যও নাজাতের অছিলা হবে,’’ বলেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা।
দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশের (নিগরান) সভাপতি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘‘আল্লাহর রহমতে সুন্দরভাবে তিন দিনের সুন্নাতে ভরা ইজতেমা শেষ হয়েছে। ইজতেমা আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন, পীর মাশায়েখ ও আশেকে রাসূলদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ইজতেমায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হয়েছে। বাস্তবজীবনে একে কাজে লাগানো গেলে তাহলেই স্বার্থকতা। আসুন প্রত্যেক মানুষের কাছে আমরা ইসলামের নেকীর দাওয়াত পৌঁছে দেই।’’
দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সদস্য ও মিডিয়া বিভাগের জিম্মাদার মুফতি মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মুজাদ্দেদী আত্তারি বলেন, ‘‘গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর শুরু হয় তিন দিনের সুন্নাতে ভরা এই ইজতেমা। ইজতেমায় সারাদেশ থেকে লাখো আশেকানে রাসূলের যোগদানের মধ্য দিয়ে মাদানি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিন দিনের ইজতেমায় বিষয়ভিত্তিক বয়ান করেন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগরা। ইজতেমায় এতলোক তিন দিন তিন রাত যাপন করলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসার জন্য করা হয় মেডিকেল ক্যাম্প। দাওয়াতে ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি ইজতেমায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দিনরাত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পরপরই নেকির দাওয়াত পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩দিন, ১২দিন, ৩০দিন ও ৬৩দিনের জন্য সংগঠনটির প্রায় ১১২টি টিম মাদানি কাফেলা সফর শুরু করেন।