বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইউরোপিয় ইউনিয়ন সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন।
মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্থনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইআরএফ সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল ও সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির ৬০ শতাংশ যায় ইউভূক্ত ২৮টি দেশে। যা এদেশের জিডিপির ১০ শতাংশ। বাংলাদেশে জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১১ শতাংশ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা বাংলাদেশের জিডিপিতে আরো বেশি অবদান রাখতে চাই। এর জন্য সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা দু’টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছি। একটি হলো বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার করা। অপরটি হলো এই সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা।’
তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা চমৎকার এবং এটা অর্জন সম্ভব।’ এই লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সব কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে আরো সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল অবকাঠামো বিনির্মাণ ও সামুদ্রিক অর্থনীতির সম্ভবনা কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে অর্থাৎ ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এজন্য কেবল পোশাক খাতে নয়, অন্যান্য শিল্প খাতেও (জাহাজ ভাঙা) আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘রানা প্লাজার মতো দ্বিতীয় কোন ঘটনার যদি পুনরাবৃতি হয়, তাহলে ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের ইমেজ দারুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে রফতানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামূক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ আর থাকবে না।’ এজন্য জিএসপি ব্যবস্থার আওতায় ইউরোপিয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বিনিয়োগ অনুকূল ইমেজের আরো প্রসার ঘটাতে হবে। এর জন্য প্রধানত অর্থনৈতিক সংস্কার বিশেষত ব্যবসায় খরচ হ্রাস করতে হবে।’ এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেগবান করার পরামর্শ দেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৫/হাসনাত/শাহনেওয়াজ