দেহঘড়ি

চোখের ৭ সমস্যা ও তার ব্যাখ্যা

মোহাম্মদ আসিফ : চোখ মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। বলা যায়, চোখ নেই তো জীবনের কোনো স্বাদ নেই। কেননা চোখ কিংবা দৃষ্টিশক্তি পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার একমাত্র মাধ্যম। আর তাই চোখের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি চোখের যে সকল সমস্যা হয়, যেমন- চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখের খচখচে ভাব এসব সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জানা দরকার। কী কারণে চোখের এই সমস্যাগুলো হয় এবং প্রতিকার কী, আজ আপনাদের সামনে সে কথাই তুলে ধরব। চোখ চুলকানো এবং পানি পড়া

 

এ ধরনের সমস্যায় দুই চোখ চুলকায় এবং চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখ লাল হয়ে যায়। মূলত এলার্জির কারণে এমনটা হয়। বিড়ালের সংস্পর্শে কিংবা ফুলের পরাগের সংস্পর্শে গেলে অথবা ধুলার কারণে এই অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। আর তাই অ্যালার্জির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে পশমযুক্ত প্রাণী থেকে দূরে থাকতে হবে, ঘরের ধুলো পরিষ্কারক যন্ত্র বা ভ্যাকুম ক্লিনার সাবধানে ব্যবহার করতে হবে এবং ফুলের রেণুর সংস্পর্শে কম থাকতে হবে। নিউইয়র্ক সিটির ওয়েইয়েল কর্নেল মেডিসিন-এর বিশেষজ্ঞ টিম মায়ারার্ডি এ ব্যাপারে বলেন, অ্যালার্জি থেকে রক্ষা পেতে এবং দেহের ইমিউন সিস্টেমকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে একটি অ্যান্টিহিস্টামাইন ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও অ্যালার্জি প্রতিরোধক আইড্রপও চোখের জ্বালাপোড়া থেকে সরাসরি সুরক্ষা দিবে। তবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক ড্রপ ব্যবহার করা উচিত। চোখ লালের ড্রপ ব্যবহার না করাটাই ভালো। কারণ এই ড্রপ চোখ লাল হওয়ার মূল সমস্যাকে প্রতিরোধ করতে পারে না বরং সেটার প্রদাহকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি আপনার চোখের এই অ্যালার্জিগত সমস্যা ঋতুগত কারণে হয়ে থাকে কিংবা আপনি যদি আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে এর চিকিৎসার জন্য একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চোখের পাতা ফুলে যাওয়া

 

চোখের সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া অন্যতম একটি ব্যাধি। এ কারণে চোখ লাল হয়ে যায়। দুটি কারণে এই সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণ কিংবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ভাইরাল সংক্রমণ এর কারণে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া চোখের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে এর যন্ত্রণা সাধারণ নয় বলে জানিয়েছেন ডা. ম্যারিও নিয়াক্স। ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে এর যন্ত্রণা কিছুটা কমে। তবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রদাহ তার নিজ নিয়ম অনুসারেই কমতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনার চোখের ডাক্তার সংক্রমণের উপশম বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারেন। যদি আপনার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে, চোখে হালকা অথবা তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, কোনো কিছু দেখতে সমস্যা হয় কিংবা চোখ লাল হয়ে যায় তাহলে শিগগির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চোখের কোণায় বা চোখের পাতায় ঘা

চোখের পাতায় কিংবা পাতার সংযোগস্থলের একেবারে কোণায় মাঝে মাঝেই ব্রণ এর মতো আকারে কিছুটা বড় গোটা দেখা যায়। এটি মূলত চোখের পাতার লোমকূপ এর ময়লার কারণে সৃষ্টি হয়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করলে এমনটা হয়। চোখের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে উষ্ণ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখের পাতা মুছলে উপকার হবে। তবে যদি এই সংক্রমণ আরো বেদনাদায়ক কিংবা বিরক্তিকর হয় তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক ওয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করার নির্দেশনা দিবেন। ডা. ম্যারিও নিয়াক্স জানান, যদি ঘরের ট্রিটমেন্টে চোখের এই সংক্রমণের আশানুরূপ উপশম না হয় এবং সেই সঙ্গে যদি চোখের পাতার ঘা শক্ত রূপ ধারণ করে এবং যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে দেয় তাহলে শিগগির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ আপনার চোখের ঘা তে ইনজেকশন দিয়ে এর যন্ত্রণা কমিয়ে আনতে পারবেন। চোখের শুষ্কতা ও শুকনো ভাব

চোখে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা না থাকে কিংবা চোখে জলের উপস্থিতি না থাকে তাহলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। অথবা আপনার চোখের ভেতরের লিকুইড যদি স্বাভাবিক না হয় কিংবা যদি চোখের জল জলদি শুকিয়ে যায় তাহলে এ সমস্যা হতে পারে। মূলত চোখের পাতার তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলো বাধাগ্রস্ত হলে চোখের তরল উপাদান শুকিয়ে গিয়ে এই সমস্যা হয়। ডা. ম্যারিও নিয়াক্স বলেন, যদি প্রতি ৪ সেকেন্ডে চোখের পলক না ফেলা হয় তাহলে চোখে উৎপাদিত তেল সেখান থেকে চলাচলে বাঁধার সম্মুখীন হয় এবং এর ফলে চোখের পানি শুকিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, যদি কখনো কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি চলে আসে তবে সেটা তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা সমাধানের জন্যই আসে। চোখের শুষ্কতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- ওষুধের প্রভাব, শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং দীর্ঘ সময় ধরে চোখে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার। চোখের এই শুষ্কতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (এই অ্যাসিডের ভালো উৎস হল স্যালমন মাছ) সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন এবং সেই সঙ্গে আপনার বাসার বাতাসে জলীয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সমস্যা যদি বেশি জটিল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হবে, সেই সঙ্গে আর এক্স আই ড্রপস চোখের তরল নিঃসরণে লম্বা সময় ধরে সাহায্য করে। চোখের শুষ্কতার ব্যাপারটিকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা এটি কর্ণিয়ার ক্ষতি করার পাশাপাশি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে। চোখে জ্বালা অথবা ব্যথা

চোখের এই সমস্যাকে ব্লেফারিটিস বলা হয়ে থাকে। চোখের পাতার পাপড়িতে যেই তেল উৎপাদন গ্রন্থি থাকে সেগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই সমস্যা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এনওয়াইইউ লেঙ্গুন মেডিক্যাল সেন্টারের চক্ষু বিভাগের বিশেষজ্ঞ পায়েল প্যাটেল জানান, এ ধরনের সমস্যায় চোখের পাতা হালকা গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে বার বার মুছলে রক্ত চলাচল আরো গতিশীল হয় এবং গ্রন্থির তেল কমিয়ে চোখের তরলের চলাচলের রাস্তাকে সহজ করে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণে তিনি এই ট্রিটমেন্ট দিনে ৩ থেকে ৪ বার করার পরামর্শও দেন। এছাড়াও যে কেউ চোখের জন্য তৈরি শ্যাম্পু দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে চোখের পাতা পরিষ্কার করতে পারবেন। এতে করে চোখের এই সমস্যার সংক্রমণ কমে যাবে। চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে ব্যথা হওয়া

চোখের কর্ণিয়ায় আঘাত লাগলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি। শুধু চোখ লাল হওয়া

এ সকল সমস্যা ছাড়াও যদি আপনার চোখ লাল হয়ে যায় (চোখে কোনো চুলকানি কিংবা ব্যথার অনুভূতি না হয়, কিংবা চোখের পাতায় কোনো গোটা না হয়, পাতা না ফুলে যায়) সেক্ষেত্রে আপনার চোখের ডাক্তার এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তথ্যসূত্র : হেলথ রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুন ২০১৭/ফিরোজ /মারুফ