সন্ধ্যার পর তারা এক দল হয়ে নামেন। ছুটে যান শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, অভাবী মানুষের দ্বারে দ্বারে। সারাদিনে যোগাড় করা খাদ্য ও পোশাক পৌঁছে দেন গোপনে, চুপিসারে। এরা ময়মনসিংহ শহরের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের দল।
তারা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল মানুষ, তাদের কেউ কবি, কেউ চিত্রশিল্পী, কেউ আবার নতুন চাকরিজীবী।
এই দলে আছেন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘গ্রাফিটি’র কর্ণধার শামীম আশরাফ, চারুশিল্পী পর্ষদের আহ্বায়ক মো. রাজন, চিত্রশিল্পী রাহাত, কবি কাঙ্গাল শাহীন, কবি জহিরুল ধ্রুব, গীতিকার জুলহাস উদ্দিন আকন্দ, কবি আরাফাত রিলকে ও জোনায়েদ আনসারী।
এদের দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টা ভাগ করা। করোনা পরিস্থিতিতে দলটি গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকার তরুণদের নিয়ে। এরা সকালে একেক এলাকায় যান, সেখানে গিয়ে নিম্নবিত্ত ও অসহায় মধ্যবিত্ত কয়েকটি পরিবার খুঁজে বের করেন।
দুপুরে আবার দলের সদস্যরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে তথ্য বিনিময় করেন এবং অতিপ্রয়োজনীয় সাহায্যের পরিমাণ নির্ধারণ করেন।
পরে সহায়তা পেতে ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচ্ছল বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চাহিদা মতো প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলে বিশ্রামে যান দলের সদস্যরা। আর প্রতিশ্রুতি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হলে পরিচিত ধনী ব্যক্তি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালীদের কাছে যান স্বশরীরে।
তাদের কাছ থেকে অর্থ পেলে তা দিয়ে কিনে ফেলে খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় পণ্য। পর্যাপ্ত সহায়তা না পেলে সেদিন নিজেদের টাকায় গড়ে তোলা তহবিলে হাত দিতে হয়।
এশার নামাজের পর আবার মিলিত হন দলের সদস্যরা। এবার পূর্বে শনাক্ত করা পরিবারগুলোতে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এই কাজ চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। শহরের অভাবী পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।
এই দলের অন্যতম উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ বলেন, তারা প্রতিদিন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ পরিচিতজনদের কাছ থেকে সহায়তা পেতে বেশি সময় দিতে হতো। এখন অনেকেই নিজ থেকে দিচ্ছেন।
এখন তারা ঈদের জন্য মাংস ও পোশাক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের নেটওয়ার্কের বাইরের অভাবী মানুষের সহায়তার জন্য কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন কাজ করছে। শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে জড়িতরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যে কাজ করে যাচ্ছেন, তা অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে।
ঢাকা/বকুল