এক বছর ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের পাথাইলহাট মধ্যপাড়া গ্রামের দিনমজুর আকবার আলী (৬৩)।
চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফুরিয়েছেন নিজের জমানো সকল অর্থ। স্ত্রী নজিমন খাতুন (৪৮) বাতের ব্যথার কারণে ৬ মাস হলো চলাচল করতে পারেন না বললেই চলে।
উপার্জন বন্ধ থাকায় এখন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এর মধ্যে রোজার শুরুতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের দেওয়া দুই দফায় ৬ কেজি করে ১২ কেজি চাল শেষ। এখন কীভাবে তাদের খাদ্যের যোগান আসবে ভেবে দিশোহারা আকবার-নজিমন।
রোববার (১৭ মে) সকালে সরেজমিনে এই দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি দোচালা টিনের ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছেন অসুস্থ আকবার আলী। তার পাশে বসে আছেন স্ত্রী নজিমন খাতুন।
আলাপকালে নজিমন জানান, এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তারা। দুই ছেলে আকমত আলী ও আলম হোসেন বিয়ের পর দিনমজুরি করে আলাদা সংসার চালায়। নিজেদের ৪-৫ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খায় তারা। তার ওপর বাবা-মায়ের খরচ দিতে পারেন না। বৃষ্টি হলে টিনের ভাঙা চাল দিয়ে পানি পড়ে। তার মধ্যেই বাধ্য হয়ে বসবাস করেন এই দম্পতি।
আকবার আলী দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হার্ট ও অ্যাজমার সমস্যা ছাড়াও তার পেট ব্যাথার সমস্যা রয়েছে। তারপরও কাজ করতেন। কিন্তু এক বছর হল আর কাজ করতে পারেন না। এখন শয্যাশায়ী অবস্থায় দিন কাটছে তার। নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়েও জমানো কিছু টাকা ছিল তা শেষ করেছেন। তারপর স্ত্রী নজিমন খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু গত ৫ মাস হল তিনিও বাত ব্যথায় চলাফেরা করতে কষ্ট হওয়ায় কাজ করতে পারেন না। এখন সংসারের উপার্জন বন্ধ। ঘরে নেই খাবার।
নজিমন খাতুন জানান, করোনা শুরুর পর রোজার শুরুতে স্থানীয় মেম্বার ৬ কেজি করে দুইবার ১২ কেজি চাল দিয়েছিলেন। কখনও তরকারির অভাবে শুধু পান্তা খেয়ে রোজা থাকতে হয়েছে তাদের। সেই চাল ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন তার ঘরে নেই কোনো খাবার। এখন প্রতিবেশিরা যদি কিছু দেয় তাহলেই কেবল তাদের খাওয়া হয়। নইলে না খেয়ে থাকতে হয় তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে নজিমন খাতুন দুঃখ করে বলেন, ‘বাবারে আমার শুয়ামি অসুখে বিছনায় পইড়ে রয়েছে মেলাদিন ধইরে। আমিও কাজকাম করবের পারিন্যা। দুইবের চাইল দিছিল মেম্বার, শিডা শ্যাষ। এহন কি কইরে চলব। বৃষ্টি হলি ঘরে পানি পড়ে। খুব কষ্টে দিন যাতিছে, এভাবে তো চলবের পারতিছি না। তুমরা আমাগারে জন্যি কিছু ব্যবস্থা কইরে দেও ব্যাটা তাইলে বাঁচি।’
বৃদ্ধ আকবার আলী বলেন, ‘এহন বাইচে থাহাডাই বড় বিষয়। ঘরে খাবার নাই। খাবার পাইলে হয়তো বাইচে থাকতি পারবো। তারপর যদি চিকিৎসা করবার ব্যবস্থা হয় তাইলে হইল, নাইলে ভুগতি ভুগতি মরা লাগবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার মোহাম্মদ রায়হান জানান, যদি তাদের আরো খাদ্য সহায়তা লাগে দেয়া হবে। তাদের নাম পরিচয় দেন। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
এদিকে, সমাজের বিত্তবানদের ও দয়ালু মানুষদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এই দম্পতি। হয়তো আপনার একটু সহযোগিতায় তাদের খাবার ও চিকিৎসার অর্থের সংস্থান হতে পারে। তাদের মোবাইল না থাকায় দেয়া সম্ভব হলো না। তবে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন, বিশ্বস্ততার সঙ্গে হিসেবসহ ওই পরিবারকে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
শাহীন রহমান (সংবাদকর্মী) ০১৭৩৩-১১৮১৬৭ (বিকাশ, পার্সোনাল) শাহীন/বুলাকী