অফিসের কাজে আব্বা আম্মাকে ছেড়ে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। প্রাইভেট চাকরি করি, তাই সব সময় বাড়িতে যেতে পারি না। মাঝে মাঝে বাড়িতে ফোন দেই, আম্মার সাথে কথা হয়। কথা হয় ছোট বোনের সাথে। প্রায় তিন মাসের মতো হতে চললো, আব্বার সাথে কথা হয় না। আব্বা মোবাইল ব্যবহার করে না। কৃষিকাজ করে। মোবাইলের এত জটিল টিপাটিপি আমার সহজ সরল আব্বা বুঝে না। চাকরিতে নতুন ঢুকে প্রথম বেতন পেয়েই আব্বাকে মোবাইল কিনে দিতে চেয়েছিলাম, আব্বা রাজি হয়নি। বলেছে তোর মাকে দে, ওইটাতেই তোর মা আর আমি কথা বলবো। তাই বেশির ভাগ সময় মোবাইলটা মায়ের কাছেই থাকে। তাই যখনই ফোন দেই মায়ের সাথে কথা হয়। আব্বাকে পাই না। হয় নামাজে গেছে, না হয় বাইরে গেছে।
সারাদিন কাজ করে শরীর ক্লান্ত থাকে, তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। রাতে আর কথা বলা হয় না। ইদানিং প্রতিদিন আর কথা বলা হয় না। মাঝে মাঝে হয়। এক শুক্রবার রাতে আব্বার কথা খুব মনে হচ্ছিলো। রাত তখন ১০টা। গ্রামের বাড়িতে রাত ১০টা মানে নিশুতি রাত! আব্বা আম্মা নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার পরেও মন মানলো না। আব্বার সাথে কথা বলার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কতদিন আব্বাকে আব্বা বলে ডাকি না। তাই ফোন দিলাম। যথারীতি আম্মা ফোন রিসিভ করলো।
আম্মা: কেমন আছিস বাবু?
আমি: আমি ভালো আছি আম্মা। আব্বা কই? তুমি আব্বাকে দাও।
আম্মা: কেন কী হয়েছে?
আমি: তুমি আব্বাকে দাও তো।
আব্বা ফোন ধরে বললো, কি রে বাবু কেমন আছিস?
অনেকদিন পর আব্বার কণ্ঠ শুনতে পেয়ে চোখে পানি চলে আসলো। আমি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকলাম, আব্বা, আব্বা, ও আব্বা, আব্বা....
আব্বা অনেকটা আবেগঘন কণ্ঠে বললো, কী হয়েছে বাবু? আমি আবার পাগলের মতো বলতে থাকলাম, আব্বা, আব্বা, ও আব্বা...
কী হয়েছে বাবু? কী হয়েছে? আমি তোর আব্বাই তো বলছি! কী হয়েছে বাবু আমাকে বল?
তখন আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম, অনেক দিন আপনাকে মন ভরে ডাকি না। তাই মন প্রাণ উজার করে আপনাকে ডাকলাম। এখন মন কিছুটা হলেও ভরেছে। এই কথা বলে আমি লাইন কেটে দিলাম। একটু পরেই আম্মা ফোন দিলো। ফোন রিসিভ করতেই আম্মা বললো, কি রে বাবু তুই তোর আব্বাকে কী বলেছিস?
আমি বললাম, কেন আম্মা কী হয়েছে?
তোর আব্বা ফোনটা আমার হাতে দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কান্না করতেছে। তুই কী বলেছিস?
আমি কথা না বলে লাইন কেটে দিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম। আব্বা কানতেছে। কাঁদুক…
এই কান্নার মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই। আছে শুধু একজন পিতার সন্তানের জন্য আকাশ সমান ভালোবাসা...
ঢাকা/শান্ত