সারা বাংলা

মসজিদ মিশনের নিবন্ধন বাতিল করতে এমপি বাদশার ডিও

বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের রাজশাহী জেলা শাখার নিবন্ধন বাতিল করতে সমাজসেবা কার্যালয়কে আধা-সরকারি (ডিও) চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা।

বুধবার (২২ জুলাই) জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে এই ডিও দিয়েছেন তিনি।

এতে তিনি বলেছেন, অরাজনৈতিক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে মসজিদ মিশন রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের সরাসরি সম্পৃক্ততায় পরিচালিত হচ্ছে। শুরু থেকেই সংস্থাটির কর্মকাণ্ড স্বাধীনতাবিরোধী এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণামূলক। তাই এটির নিবন্ধন বাতিল করা প্রয়োজন।

চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের রাজশাহী জেলা শাখা ১৯৭৬ সালের ২৯ জুন জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ‘অরাজনৈতিক সংস্থা’ হিসেবে নিবন্ধন নেয়। কিন্তু সংস্থাটির গঠনতন্ত্র ও কার্যক্রম সাম্প্রদায়িক। এই সংস্থা পরিচালিত মসজিদ মিশন একাডেমীতে (স্কুল ও কলেজ) কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। অমুসলিম ছেলেমেয়েদেরও এখানে পড়াশোনার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরের দলীয় ক্যাডারদের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এটা বাংলাদেশের শিক্ষানীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।’

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সরকারের আইন অমান্য করে মসজিদ মিশন নামে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে অনুমোদনহীন কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সংস্থাটি সরকারের আইন অমান্য করে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে বিশেষ কমিটি গ্রহণের সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করেছে। সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণে থাকা রাজশাহী শহরে অবস্থিত মসজিদ মিশন একাডেমীতে নিয়োগপ্রাপ্তরা জামায়াত-শিবিরের উচ্চপর্যায়ের নেতা। তারা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন। কেউ কেউ অধিকাংশ সময় কারাগারে থাকেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে। অসহায় অভিভাবকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সামিল।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মসজিদ মিশন একাডেমী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা চাঁদা আদায় করে। সরকারের অনুদান নেয়। এছাড়া দান গ্রহণ, যাকাত, ফিতরা, সাদকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এই টাকা জামায়াতের বিস্তার লাভ এবং সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়। এ রকম অনেক তথ্য আছে। তাই তারা আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করে না। অডিটও করায় না। এটি সমাজসেবা কার্যালয়ের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর সামিল’।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মসজিদ মিশন একাডেমীর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ছাত্রীকে নিয়ে কেলেংকারি করলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংস্থাটির কার্যক্রম চালু রাখলে এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটবে। এছাড়া সংস্থাটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাই সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করা প্রয়োজন।’

এমপি ফজলে হোসেন বাদশা চিঠিতে সংস্থাটির নিবন্ধন (নিবন্ধন নং-রাজশাহী ৯৬ (২১১)/৭৬) বাতিল করার সুপারিশ করে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের সহযোগিতা কামনা করেন।

চিঠিতে এমপি বাদশা আরও উল্লেখ করেন, ‘বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। সামগ্রিক সমস্যা ও সংকট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘সেই ১৯৭৬ সালে মসজিদ মিশন নিবন্ধন নিয়েছে। তারপর তারা আর কোনো দিন যোগাযোগ করেননি। কমিটির অনুমোদন নেননি, অডিট করেননি। নিজেরা নিজেদের মতো করেই চলেছেন।’

তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, জানতে চাইলে হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘এতো দিন তাদের কথা কেউ হয়তো মনেই রাখেননি। এমপি ফজলে হোসেন বাদশার ডিও পেয়ে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি বিষয়টি অধিদপ্তরকে জানাব। তারপর যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

তানজিমুল হক/সনি