অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘সিপিডির তথ্য আন্দাজনির্ভর। তারা গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে জিডিপি নিয়ে মন্তব্য করেছে। আমরা বাজেট দিলেই তাদের একটা অনুষ্ঠান করার সময় হয়।’
সোমবার (১৭ আগস্ট) চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা ও বিবিধ বিষয়ে ভার্চুয়াল সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বক্তব্য দেয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে তারা রাজনৈতিক সংখ্যা বলেও অভিহিত করে। পাশাপাশি পরিসংখ্যানের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবিও তোলে সিপিডি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ অর্থমন্ত্রী তার অবস্থান তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব যারা করেন, তাদের দুটি ভিত্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। এর একটি হচ্ছে তথ্য, অন্যটি হচ্ছে অনুমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হিসাব করে। সিপিডি যদি আন্দাজনির্ভর জিডিপি নিয়ে কথা বলে, তাহলে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা নিজেরাই বুঝতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে দেখেছি, সিপিডি আমাদের তথ্য-উপাত্ত কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আমরা বাজেট দিলেই তাদের একটা অনুষ্ঠান করার সময় এসে যায়। সারা বছর কোনো অনুষ্ঠান নেই। কয়টা অনুষ্ঠান করে? কাঁচামাল এখান থেকে নিয়ে বিদেশে এগুলো এক্সপোর্ট করে। এই হলো তাদের ব্যবসা।’
সম্প্রতি বিবিএস জানিয়েছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। তবে এর আগে সিপিডির পক্ষ থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। অর্থাৎ সিপিডি যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, সরকারি হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি তার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সিডিপির ব্যবসা সহজ। তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। তারা আছে বলেই আমরা আরো অনুপ্রাণিত হই। আরো বেশি শক্তিশালী হওয়ার জন্য আত্মপ্রত্যয়ী হই এবং আমরা কাজ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করি। আমরা যখন যা বলেছি, তখন তাই সঠিক হয়েছে। সুতরাং এরা কী বলল, সেটা দেখে লাভ নাই।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে তথ্য কোথায় আছে? কোন তথ্য তারা রাখে? তাহলে তারা এসব কীসের ভিত্তিতে বলছে? ওরা কি রাস্তাঘাট দেখে না? আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দেখে না, আমাদের মেগাপ্রজেক্টগুলো দেখে না? সবকিছু তারা দেখতে পায়, তারা যদি আমাদের রাজস্বের দিকে তাকাতো।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে যে পরিমাণ আমরা রাজস্ব আহরণ করেছি, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও তার কাছাকাছি রাজস্ব আহরণ হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। আর এ করোনাকালেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা কম। সুতরাং এ থেকেই তো বোঝা যায়, জিডিপির প্রবৃদ্ধি কেমন হওয়ার কথা।’
তিনি বলেন,‘আমি যদি আগের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮ দশমিক ২ শতাংশ বলতাম তাহলেও তারা বলতে পারতো, এটা কীভাবে হলো? আমি তো ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বলিনি। আমি ৫ দশমিক ২ ভাগ বলেছি। সুতরাং ৫ দশমিক ২ ভাগের পরে তারা প্রশ্ন করবে? যাহোক, এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।’
সরকার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপি নির্ধারণ করে, আর এতদিন থেকে কাজ করা সিপিডি আন্দাজের ওপর কাজ করছে, এটা কি যথার্থ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলেছি যথার্থ। ওদেরকে তাহলে আমাদের এক বছরের জিডিপি বের করে দিতে বলেন। আমাদের পরিসংখ্যান অফিসে যেতে পারবে না, তারা নিজেরা পরিসংখ্যান দিক।’