কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রায় ৪০ প্রতিষ্ঠানকে ২৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানি। যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকসহ ৪ জনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান জিজ্ঞাসাবাদকালে এমন তথ্য পান।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুজ্জামান, এভিপি আসলামুল সোহাগ ও সিনিয়র ম্যানেজার মো. রাফসান রিয়াদকে।
দুদক-সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। প্রত্যেকেই নিজের দায় এড়িয়ে পি কে হালদারকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী করেছেন।
এই প্রসঙ্গে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাশেদুল হক মূলত প্রশান্ত কুমার হালদারের ডান হাত ছিলেন। ২০১০ সালে পি কে হালদার যখন রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন, তখন রাশেদুল হক ওই কোম্পানির ডিএমডি ছিলেন। ২০১৫ সালে পি কে হালদার যখন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন, তখন রাশেদুল হক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে এমডি হিসেবে যোগ দেন। এমডি হিসেবে দিয়েই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেন। কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ প্রস্তাবের পরদিনই ঋণ দিয়ে দেন। এভাবে প্রায় ৪০ প্রতিষ্ঠানকে ২৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন, যার বেশির ভাগই ক্ষেত্রেই কোনো মর্টগেজ ছিল না।’
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ জন্য ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’ এদিকে, অন্য একটি সূত্র জানায়, উজ্জ্বল কুমার নন্দী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে ও অমিতাভ অধিকারী পিপলস লিজিং পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে অমিতাভ অধিকারী হলেন পি কে হালদারের আপন খালাতো ভাই। উজ্জ্বল কুমার নন্দী হলেন পি কে হালদারের পুরনো অফিসের সহকর্মী। যারা বেনামি প্রতিষ্ঠান দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে টাকা বের করে নেন। পরবর্তী সময়ে একই কায়দায় পিপলস লিজিং থেকে টাকা বের করে প্রতিষ্ঠানটিকে পথে বসিয়েছেন।’
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, ‘পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩২০০ কোটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আজ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধান চলছে।’
প্রসঙ্গত, আলোচিত পি কে হালদার চক্রের প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৯ কর্মকর্তা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
২০০৯ সালের ১০ আগস্ট পি কে হালদারসহ ৫ জনকে তলব করে দুদক। যদিও পি কে হালদার অনেক আগেই দেশ থেকে পালিয়েছেন। রিল্যায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পি কে হালদার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগীসহ ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হয়।