গ্যাস-বিদ্যুৎ-বিভাগের স্বয়ংক্রিয় ই-বিলিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে ই-বিলিংয়ের বিষয়টিই নিশ্চিত হবে। সরকার বলছে, আগামী ৩ বছরের মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া ৯০ শতাংশ এলাকা স্মার্ট মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-বিলিং সিস্টেম থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল প্রস্তুত হবে। তখন অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ উঠবে না। এছাড়া, এখন একজন নাগারিক সারাবছর ভ্যাট বাবদ কী পরিমাণ টাকা দেন, তার সঠিক তথ্য তাদের জানার সুযোগ থাকে না। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে একজন গ্রাহকের প্রত্যক্ষ অবদান কত, তাও জানা যায় না। ভ্যাট বাবদ গ্রাহকের দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হলো কি না, তাও স্পষ্ট থাকে না গ্রাহকের কাছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিশিন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ডিজিটাল প্রি-পেইড মিটার সীমিত পরিসরে চালু করেছে। কিন্তু ডিজিটাল বিলিং সিস্টেম বলতে যা বোঝায়, তা হয়নি। তবে, এসব কোম্পানি যে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করে, তা দ্বিতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি নয়। স্মার্ট প্রযুক্তিতে ভেন্ডিং মেশিনের দরকার হয় না। তবে এই দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিতে মোবাইল আর্থিকসেবা প্রযুক্তি (এমএফএস) ব্যবহার করে বিল পরিশোধের একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও এটি স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার নয়।
স্মার্ট প্রযুক্তিতে গ্রাহক অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তের ব্যবহারের চিত্র দেখতে পাবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ কিংবা বাড়াতে পারবেন, টাকা কমে এলে সংকেত পাবেন। আর অ্যাপ থেকেই বিল পরিশোধ করতে পারবেন।
এদিকে, গ্যাস সরবরাহ করা কর্তৃপক্ষও ডিজিটাল মিটার চালুর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বিল পরিশোধে গ্রাহক ভোগান্তি রয়েই গেছে। গ্রাহককে যেতে হচ্ছে সেই নির্ধারিত কিছু ভেন্ডিং মেশিনওয়ালার কাছে কিংবা নির্ধারিত পয়েন্টে। অথচ এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিল পরিশোধের ক্ষেত্রটি ডিজিটাল হলেও বিল তৈরিতে সেই আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতিই রয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ই-বিলিং সিস্টেম চালু হলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। এছাড়া, সরকার চাইলে গ্রাহকের দেওয়া ভ্যাটের বিপরীতে জনগণকে আয়কর রিবেট দেওয়ার কথাও চিন্তা করতে পারে। আয়কর রিবেট পাওয়ার লক্ষ্যে সাধারণ জনগণ বিক্রেতার নিকট থেকে ই-বিল সংগ্রহে আগ্রহী হতে পারে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ই-বিলিং সিস্টেম চালুর বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এটি চলমান রয়েছে। আমরা স্বয়ংক্রিয় সেবা নিশ্চিতে স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতেও ই-বিলিং সেবাই পাবে গ্রাহকরা। ২০২৩ সালের মধ্যে সবাইকে স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের এর বাইরে রাখা হচ্ছে আপাতত। ’
মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘স্মার্ট মিটারগুলো প্রিপেইড হয়। এসব মিটারে গ্রাহক বিদ্যুতের ব্যবহার ও বিল সম্পর্কে নিজে জানার সুযোগ পান। বিভিন্ন ভেন্ডিং স্টেশন, ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্টে, মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক তার বিদ্যুৎ মিটারের বিল রিচার্জ করতে পারেন।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ানো যাবে, স্বচ্ছতাও তত বাড়বে। সব স্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিল নিয়ে অভিযোগের সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছি। স্মার্ট মিটার ব্যবহার করতে পারলে এই অভিযোগ উঠতো না।’ এছাড়া ই-বিলিং সিস্টেম নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।