প্রায় ৩৬শ কোটি টাকা পাঁচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) দেশে ফিরতে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। আবেদনে তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনার করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে আবেদনে।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে পি কে হালদারের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন এ আবেদন করেন।
পরে ওই আবেদনের শুনানিতে আদালত পি কে হালদারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কবে-কোন ফ্লাইেট দেশে আসতে চান তা আদালতকে জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীসহ সব পক্ষের কথা শুনে আইন অনুযায়ী আদেশ দেবেন বলে জানান আদালত। দেশে এসে আইনের হেফাজতে পি কে হালদারকে থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন আদালত।
আদালতের এ বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি প্রায় ৩৬শ কোটি টাকা পাচার করার ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক পি কে হালদারসহ উনিশ জনের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পার্সপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যরা হলেন,কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জী, পাপিয়া ব্যানার্জী, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নরুজ্জামান, আবুল হাসেম, রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাব অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডে বিনিয়োগকারী দুই জনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে লোপাট করেছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
নাম প্রশান্ত কুমার হালদার, সংক্ষিপ্ত রূপ যার পি কে হালদার। প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন ও নতুন আরও কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন পি কে হালদার। নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা পি কে হালদার।