অস্ত্র আইনে করা মামলায় সাহেদ করিম ও শামীমা নূর পাপিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সাহেদের ও আগামী ১২ অক্টোবর পাপিয়া ও মফিজুরের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। ঢাকার এক নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হচ্ছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
পাপিয়ার আইনজীবী শাখাওয়াত উল্যাহ ভূঞা বলেন, আমরা শুরু থেকে দাবি করে আসছি এটা সাজানো মামলা। হয়রানির জন্য তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখানো হয়েছে। সাক্ষীদের জেরায় এটা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আসামিরা নির্দোষ। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করছি তারা খালাস পাবেন।
তিনি বলেন, মাত্র ১২ কার্যদিবসে মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে। এত দ্রুত আগে এরকম কোনো মামলার বিচার শেষ হয়েছে বলে জানা নেই।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো মামলার বিচার এত দ্রুত শেষ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আশঙ্কায় আছি। আশা করছি, তিনি খালাস পাবেন।
উল্লেখ্য, ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। ৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় করোনা টেস্ট প্রতারণার অভিযোগে মামলা করে র্যাব। মামলায় সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এ মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এস এম গাফফারুল আলম সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করেন। গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. শায়রুল ইসলাম ঢাকা সিএমএম আদালতে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১৩ আগষ্ট মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। গত ১৯ আগষ্ট আদালত ডিবি পুলিশের দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন। গত ২৭ আগস্ট সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ১০ সেপ্টেম্বর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর তা শেষ হয়। চার কার্যদিবসে চার্জশিটভুক্ত ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন সাহেদ। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাহেদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০ সেপ্টেম্বর সাহেদের পক্ষে তার আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ওইদিন আদালত মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাপিয়া দম্পতিকে আটক করা হয়। তাদের ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসায় ২৩ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে অস্ত্র, বিদেশি মদ, নগদ অর্থ ও ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি করে দুটি ও বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ২৯ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুজ্জামান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন। ঢাকার ১ নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১৮ আগস্ট আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন। গত ২৩ আগস্ট একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। ছয় কার্যদিবসে মোট ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেন। ওইদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর ধার্য করেন।