কার্তিক মাসের শুরু। শীত আসি আসি করছে। এ সময়টা মূলত শীতকালীন সবজি চাষের উপযুক্ত সময়। বেগুন, লালশাক, ঢেঁড়স, টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ আরও নানা রকমের সবজির বীজ বপনের সময় শুরু হয়েছে। শীতকালে প্রচুর সবজি পাওয়া যায়, যার আবাদকাল এই কার্তিক মাস।
বাংলাদেশে সবজির ঘাটতি মেটাতে বড় একটি অবদান রেখে চলে নরসিংদী জেলা। এ জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন করা হয়। মোট ৬টি উপজেলার মধ্যে শিবপুর, বেলাব, রায়পুরা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদিত হয়।
নরসিংদী জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, এ বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির চাষ হয়েছে। তাই তারা এবার শীতকালীন সবজি নিয়েও বেশ আশাবাদী।
এদিকে ব্যস্ত সময় কাটছে এ সব অঞ্চলের কৃষকদের, শুরু হয়েছে জমিতে বীজ বপনের ধুম। তাদের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য দিতে উপজেলা ভিত্তিক আয়োজন করা হচ্ছে নানা কর্মশালা।
তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৮ অক্টোবর) মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নে চলতি ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কীটনাশক প্রয়োগ এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লেবুতলা ইউনিয়নের কৃষকরা।
মনোহরদী উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই বাড়ির পাশে কিছু কিছু সবজি চাষের জন্য আগ্রহী। এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনীয় সবজির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু ফসল, যেগুলো বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন সম্ভব, যেমন শিম, লাউ, টমেটো ইত্যাদি সবজি উৎপাদনে অধিক আগ্রহী তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অফুরন্ত অবসর সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ অঞ্চলের কিছু শিক্ষার্থীও তাই শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
নরসিংদী জেলার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার বসে রায়পুরা উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে। এ সময় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকেরা সবজি পিকআপ, ভ্যান, রিকশা কিংবা অন্যান্য পরিবহন যোগে নিয়ে যান সেখানে। এত বড় সবজি উৎপাদনশীল জেলা হয়েও নরসিংদীতে এখনও নেই তেমন কোনো ভালো মানের হিমাগার। ফলে এ সব সবজি নিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ সম্পর্কে এক ব্যবসায়ী জানান, তাদের ফসল বেশি উৎপাদিত হলেও সমস্যা, কেননা তারা ন্যায্য মূল্য পায় না। কারণ পাইকারি দামে বিক্রি করতে হয়, নয়তো ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আবার কম উৎপাদিত হলেও তারা তাদের পারিশ্রমিক তুলতে পারেন না। বিভিন্ন সময় প্রতিনিধিরা হিমাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা এখনও প্রতিয়মান হয়নি। তাই এ জেলার কৃষকদের দাবি, এখানে ভালো মানের হিমাগার হলে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতেন।
এছাড়া, এ বছর সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদনের জন্য যশোর জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যশোর জেলায় বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৮ লাখ টন সবজি উৎপাদন করা হয়। আশা করা হচ্ছে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ সংখ্যক সবজি উৎপাদনে সক্ষম হবে এ জেলা।
অন্যান্য সবজি উৎপাদনশীল জেলাগুলোতেও শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য বীজ বপন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবজি উৎপাদন সম্ভব হলে কমবে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির অস্থিতিশীল অবস্থা।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ঢাকা/মাহি