জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা আশরাফ শিশির। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘৫৭০’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে এটি।
ইতিহাসভিত্তিক এ চলচ্চিত্রে এয়ার ভাইস মার্শাল আবদুল করিম খন্দকার অর্থাৎ এ. কে. খন্দকার চরিত্রে অভিনয় করছেন ইবনুল কাইয়ুম সনি। কয়েক দিন আগে শুটিংয়ে অংশ নেন এই অভিনেতা।
রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে সনি বলেন—আমি এ. কে. খন্দকার চরিত্রটি রূপায়ন করছি। ১৯৭৫ সালে এয়ার ভাইস মার্শাল ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকার গঠনের আগে গণভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিদ্রোহী মেজরগণ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন। সেই দীর্ঘ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ নানা সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর লাশ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে একদিন একরাত ধরে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় বঙ্গভবনে চলে ভোজ, পান ও নারীদের নিয়ে উৎসব। উৎসব শেষে বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য সবার লাশ বনানি কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়ায় তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফনের সিদ্ধান্ত জানান খন্দকার মোশতাক। সেই মুহূর্তটি বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
চরিত্রটি রূপায়নের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন? জবাবে সনি বলেন—চরিত্রটি রূপায়নের জন্য যখন নির্বাচিত হই, তখন থেকেই তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হতে থাকি। ’৭৫ সালে এ. কে. খন্দকারের বয়স ছিল ৪২ বছর। বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে সুদর্শন এই ভদ্রলোকের বাহারি গোঁফ ছিল। গোঁফ অনেকে ক্রেপ দিয়ে তৈরি করেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এটাকে বাস্তব ভিত্তি দেওয়া উচিত। এজন্য প্রায় দুই মাস শেভ করিনি। শুটিংয়ের আগের দিন তৈরি হয়ে যায় গোঁফ। যা শুটিং সেটে প্রশংসা কুড়ায়।
অনলাইনে এ. কে. খন্দকারের তেমন ছবি বা ভিডিও নেই। গত বছর তার ‘১৯৭১-ভেতরে বাইরে’ বইটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে সংবাদমাধ্যমে তার বর্তমান সময়ের কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। আর সেসব দেখে ওই সময়ে তিনি কীভাবে কথা বলতেন, কীভাবে হাঁটতেন তা আয়ত্ত করা খুব কঠিন। তবু সেগুলো সংগ্রহ করে বারবার দেখে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন তিনি। তাছাড়া ‘১৯৭১-ভেতরে বাইরে’ বইটি পড়ে তার মানস জগতের খানিকটা পরিচয় পান, যা চরিত্রটি রূপায়নে সাহায্য করেছে বলে জানান সনি।
তবে শুটিং সেটে পায়ের জুতা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন ইবনুল কাইয়ুম সনি। সেই অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে এ অভিনেতা বলেন—আমার চরিত্রের প্রায় সব অংশ বসে থাকার দৃশ্য টেক করা হয়েছে। তাই পায়ে ফিট না হওয়া (কয়েক সাইজ বড় জুতা) জুতা জোড়া নিয়ে যে অস্বস্তি ছিল তা কেটে যায়। বাস্তবে এ. কে. খন্দকার আমার চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক বেশি লম্বা, বসে থাকার কারণে সেটাও কাভার হয়ে গেছে। তাছাড়া সংলাপও ছিল না, কেবল অভিব্যক্তি দিয়ে দৃশ্যগুলো কাভার করা হয়েছে। বলতে গেলে সিনেমা জুড়ে এক্সপ্রেশনের খেলা।
ইতিহাসভিত্তিক চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন আশরাফ শিশির। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে আশরাফ শিশির বলেন—১৯৯৬ সালে দায়েরকৃত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করেছি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় কী কী ঘটেছিল, সিনেমায় তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
‘৫৭০’ চলচ্চিত্রে ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফির (ডিওপি) কাজ করছেন সমর ঢালি। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন—যেকোনো চলচ্চিত্রের প্রতিটি মহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু কিছু দৃশ্য থাকে যেগুলো মনে দাগ কাটে। ‘৫৭০’ চলচ্চিত্রের একটি মুহূর্তের কথা আমাকেও নাড়া দিয়েছে। আর তা হলো, বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দাফনের দৃশ্যটি। ইতিহাস বলে মৃত্যুর পরেও বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে অসম্মান করা হয়েছিল। লাশকে অসম্মান করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু লাশ যখন দাফন করা হয়, তখন আর্মি সদস্যরা লাশগুলোকে যে সম্মান দেন তা দর্শকদেরকেও স্পর্শ করবে। এখানে লাশগুলোকে সম্মান দেখানোর বিষয়টি দর্শকদের নাড়া দিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস।
চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন—বাপ্পী চৌধুরী, স্বাধীন খসরু, মাসুম আজিজ, কাজী রাজু, সুমনা সোমা, সুজয় রাজ, কায়সার নোয়েল, এলিনা শাম্মীসহ প্রায় তিন শতাধিক শিল্পী।