পৃথিবীতে যে কোনো উন্নতি, অগ্রগতি বা কোনো উদ্ভাবনার পেছনে যত বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা বা পশ্চাদপসরণ সংঘটিত হয়ে থাকে তার অধিকাংশই হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার কারণে। চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা এমনই একটি দুর্যোগ ও মহামারি যা বৈশ্বিক সংকটের একটি নাম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লকডাউন শুরুর দিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষাধারা অব্যাহত রাখতে অনেক সময়ক্ষেপণ করতে হয়েছিল। কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বজায় রেখে পড়াশোনার মধ্যে মনোনিবেশ করানো যায়, সে ব্যাপারে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রশাসকগণ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন এবং এক পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে অনলাইন শিক্ষায় পরিপূর্ণ সফলতা আনতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সম্পর্কে নিম্নে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা উপস্থাপন করা হলোঃ
বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা
বাংলাদেশে শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতে অনলাইন শিক্ষা ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে অনেক প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন: নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট না থাকা। অনলাইন শিক্ষার মূল শর্ত হলো সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট থাকা। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, অনলাইন ক্লাস করার মতো উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওয়াইফাই ও ব্রডব্যান্ড সুবিধা সম্পন্ন প্রযুক্তিগত সংযোগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ডেটা, ৩৬ শতাংশ ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২ শতাংশ শিক্ষার্থী পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করে। অথচ মোবাইল ডেটার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে শিক্ষার্থীদের বেশ বেগ পেতে হয়। অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে মোবাইল ডেটা ছাড়া ইন্টারনেট সেবা পাওয়া কঠিন। তাছাড়া শহরের বাইরে ইন্টারনেটের গতি বেশ ধীর, ক্ষেত্র বিশেষে অডিও সংযোগ পেলেও ভিডিওতে সংযোগ পাওয়া দুষ্কর। সে সাথে লোডশেডিং বিহীন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব আছে। তাই ইন্টারনেট সংযোগে বিচ্ছিন্নতা দৃশ্যমান। সুতরাং অনলাইন শিক্ষা সর্বতোভাবে নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট না থাকা একটি অন্যতম বাধা। তবে এক গবেষণার ফলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও গ্রামে অবস্থানকারী ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী যথাসময়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার অভিপ্রায়ে অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহী। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক সংকট ছাড়াও মানসিক দিক থেকেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে।
আর্থিক সংকট আরেকটি কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর তিনজন শিক্ষক কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৬ ভাগ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ডেটা ক্রয় করা প্রধান চ্যালেঞ্জ। অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যয়, ইন্টারনেট সংযোগের সংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সহজ হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর যে মোবাইল ফোন রয়েছে তাতে ইন্টারনেট সুযোগ-সুবিধা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ নয়।
কোর্স কন্টেন্ট নিশ্চিত করতে না পারা আরো একটি কারণ। অনলাইনে ফলপ্রসু ও আকর্ষণীয় ক্লাস নিশ্চিত করতে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট তৈরি করা মূল শর্ত। এটির যথোপযুক্ত উন্নয়ন করতে না পারলে অনলাইন ক্লাস চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সের ডকুমেন্ট আরো প্রাণবন্ত করা উচিত। এই সিস্টেমে ছাত্রদের টিমওয়ার্ক গঠন করে ব্রেইনস্টর্মিং করা কঠিন। তারপরও আমাদের এই পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হবে এবং অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি অনলাইন পাঠদানের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা দেয় তবে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের অভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে আমাদের মনে হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাব রয়েছে, যা অনলাইন শিক্ষার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের বিঘ্নিত সরবরাহ অনলাইন শিক্ষার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা। এখনো কিছু মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রয়েছে। অনলাইন টিচিং শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া অতি আবশ্যক। সুতরাং অনলাইন শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকা ও এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন না করা অনলাইন শিক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা। অনলাইন শিক্ষার আচরণ বিধি, শিক্ষাদান পদ্ধতি ও শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রমের শৃংখলা বিধি সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যথাযথ জ্ঞান না থাকাও অনলাইন শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা।
বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষায় অনেক ছাত্র ছাত্রী এখনো ভালোভাবে অভ্যস্ত নয়, এমনকি শিক্ষকদের মাঝেও রয়েছে অনেক অনাগ্রহ, অসহযোগিতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভংগী, যা অনলাইন শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকরা মনে করেন যে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সহজেই ক্লাস নিয়ন্ত্রণ এবং একই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর কাজ মূল্যায়ন করতে পারেন। তাছাড়া শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কম মনোযোগী শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্লাসে আকৃষ্ট করতে পারেন বলে শিক্ষকদের ধারণা। তারা আরো মনে করেন যে, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রশ্ন কোনো জটিলতা ছাড়াই সহজে উত্তর দেওয়া যায়। কিন্তু একথা সত্য যে, অনলাইনে বাস্তব, প্রয়োগভিত্তিক ও জীবনমুখী শিক্ষার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো করে অনলাইনে ক্লাসে কথোপকথন ও পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব নয় বিধায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সফল করা একটি চ্যালেঞ্জ বটে। এভাবে শিক্ষকদের নেতিবাচক মন মানসিকতা অনলাইন শিক্ষা বাস্তবায়নের পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা।
আমাদের দেশ প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে, আমরা সেভাবে এগুতে পারিনি। আমাদের দেশে কম্পিউটারের ব্যবহার মোটামুটিভাবে শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। মোবাইল, স্মার্ট ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের বিচরণ শুরু হয়েছে তারও বেশ পরে। ২০১০ সালের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষ কিছুটা অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, প্রযুক্তির ব্যবহার হতে আমাদের কত সময় লেগেছে। প্রযুক্তি সামগ্রীর উন্নততর ব্যবহারও অনেক পরে শুরু হয়েছে এবং যা হয়েছে তা আবার প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রতুলতা থাকলে বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির সরবরাহ থাকলে অনলাইন শিক্ষা অনেকটাই বাধাহীন ভাবে সচল রাখা সম্ভব হতো। তাই প্রযুক্তির অপ্রতুলতা ও তাদের ব্যবহার অনলাইন শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
একটি তথ্য জরিপে উঠে এসেছে যে, ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে জ্ঞাত ছিল না। ৩৮ শতাংশ অভিভাবক লকডাউন ও করোনাকালীন সন্তানের লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারেনি। তাছাড়া, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি অনেক শিক্ষার্থীই সমানভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। আবার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না, কারণ শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষায় যেমন অভ্যস্ত ছিল না বা অনলাইনের মতো একটি উন্মুক্ত প্লাটফরমে শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার মতো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় ঘাটতিও অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
অনলাইন শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে করণীয় ১। শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সরকারী প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। বিনামূল্যে বা ভুর্তকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতকরণের আশু পদক্ষেপ জরুরি। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যয়, ইন্টারনেট সংযোগের সংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে না। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যেতে পারে।
২। অনলাইন শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ওয়েব ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও কম্পিউটার ক্রয় করার ব্যবস্থা করা এবং সহজশর্তে সুদমুক্ত ব্যাংক লোনের ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা। অনেকের মতে, অনলাইল শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মোবাইল ডেটা সরবরাহকরণ এবং Soft loan/Grants-এর আওতায় স্মার্টফোন সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান করা খুবই জরুরি।
৩। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রতিটি শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে স্বল্পমূল্যের প্যাকেজ আকারে উচ্চগতিসম্পন্ন মোবাইল ডেটা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, যা শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাসের জন্য ব্যবহৃত হবে।
৪। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শক্তিশালী মোবাইল ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ফ্রি স্টুডেন্ট ডেটা প্যাক নিশ্চিত করা যেতে পারে।
৫। গ্রামে অবস্থানকারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষার্থীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত যোগাযোগ তরান্বিত ও দেশব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটানোর প্রয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে শিক্ষা বিষয়ক মোবাইল অ্যাপ ও নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করা।
৬। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারণ করার জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সুলভ এবং সহজপ্রাপ্য করা। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে কীভাবে গতিশীল, বাস্তবমুখী এবং সম্প্রসারণ করা যায়, সেই উদ্যোগকে সামনে রেখে সরকার, মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দকে একযোগে কাজ করা এবং চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে অনলাইন শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া।
৭। যে সব অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা টিউশনি বা পার্টটাইম কাজ করে নিজের সঙ্গে পরিবারকে সাপোর্ট করে তাদের জন্য শিক্ষার্থী বান্ধব শর্তে শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অভাবের আঘাতে যেন কোনো মেধা হারিয়ে না যায় সেজন্য শিক্ষার মতো একটি বড় খাতে সব থেকে লাভজনক বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসতে পারে।
৮। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার জন্য প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ইন্টারনেট সুবিধাসহ করোনাকালীন সংকটে অনলাইন ক্লাসের অংশগ্রহণের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৯। অনলাইন শিক্ষাধারা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা বর্তমান সংকটে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।
১০। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইন ক্লাসসমূহ কার্যকর করার প্রয়োজনে শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১১। প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রেষণা প্রদান করে অনলাইন শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উদার ও সহযোগিতাপূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং মানসিকভাবে উৎসাহিত করা।
১২। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে অতিদ্রুত কেন্দ্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে সে মতে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
১৩। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিনিয়োগকৃত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং অগ্রগতি মূল্যায়ন পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শক্তিশালী তদারকি টিম গঠন করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা।
লেখক: প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা