ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার বাংলাদেশি গবেষক মো. আলতাব হোসেনকে সংবর্ধনা দিয়েছে ওয়ালটন। সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত চেংদু-সংসিং বৈদেশিক শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক বৃত্ত প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক নম্বর ৯৬.৬২ (১০০-এর মধ্যে) পেয়ে প্রথম হন ড. আলতাব। ‘স্মার্ট চায়না শিক্ষক’ নামে চায়না ভাষা শিক্ষার ইন্টারনেটভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে ড. আলতাব হোসেনকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।
উল্লেখ্য, ড. আলতাব হোসেন ওয়ালটনের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন ও গবেষণা (আরএন্ডডি) বিভাগের প্রকৌশলী এবং চায়না অফিসের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ উপলক্ষে বুধবার (৯ ডিসেম্বর ২০২০) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজিত হয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়ালটন হাই টেক-ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম। অনলাইনের মাধ্যমে চীন থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. আলতাব হোসেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইভা রিজওয়ানা নিলু, নির্বাহী পরিচালক জাহিদ হাসান, হুমায়ূন কবীর ও ফিরোজ আলম।
এ সময় ড. আলতাব হোসেনকে অভিনন্দনস্বরূপ ক্রেস্ট দেওয়া হয়। ড. আলতাবের পক্ষে তার বড় ভাই আকতারুজ্জামান ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
সংবর্ধনা দেওয়ায় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান ড. আলতাব হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স অগ্রযাত্রার অগ্রদূত ওয়ালটন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম সহযোদ্ধা। ওয়ালটন আমাদের গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় ওয়ালটনে কাটিয়েছি। এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার এগিয়ে চলার পথে ওয়ালটনের অবদান অনেক। আজকে আমার এ কৃতিত্ব ও সাফল্যের অন্যতম অংশীদার ওয়ালটন।
অনলাইনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম এবং ড. আলতাব হোসেনসহ অন্যরা
তিনি আরও বলেন, যারা দেশের বাইরে আছেন, তাদের শিকড় ভুলে গেলে চলবে না। এই অনুভূতি আমি সবসময় হৃদয়ে ধারণ করি। ওয়ালটন এবং বাংলাদেশ আমার মননে রয়েছে। আমার সবসময় চেষ্টা থাকে, যাতে এই প্রতিষ্ঠান এবং দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, আলতাব হোসেন একজন সহজ-সরল, অমায়িক ও পরিশ্রমী মানুষ। তিনি অদম্য উৎসাহের সাথে সব বাধা পার করে এসেছেন। চীনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বাংলাদেশকে বহিঃবির্শ্বে উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করতে তার মতো আরও অনেক দেশপ্রেমিক প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ড. আলতাবের সাফল্যে ওয়ালটন পরিবার গর্বিত। ড. আলতাব ওয়ালটন পরিবারের একজন। আশা করি তিনি আরও বেশি করে বড় পরিসরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন।
উল্লেখ্য, ড. আলতাব হোসেনের জন্ম পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী গ্রামে। মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আতাউর রহমানের চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছেন অসম্ভব মেধাবী আলতাব। এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জন করে ২০০৬ সালে ভর্তি হন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পান সেখানে। ২০০৮ সালে চীনের একটি প্রতিনিধিদল হাবিপ্রবিতে যায়। সেখানে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে তাকে চীনে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। ওই বছরই ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে শেন ইয়াং ইউনিভার্সিটি অব কেমিক্যাল টেকনোলজি-তে ভর্তি হন তিনি।
এরপর ইউনিভার্সিটি অব ইলেক্ট্রনিক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নায় মাস্টার্স সম্পন্ন করে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ড. আলতাব। বর্তমানে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক হিসেবে কর্মরত।