শোনা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার স্থগিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে বাংলা একাডেমির বরাত দিয়ে এটাও শোনা যাচ্ছে, এবারের বইমেলা স্থগিত হলেও ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে।
এখন এই ভার্চুয়ালি বইমেলার পক্ষে-বিপক্ষে কথা হতেই পারে। কিন্তু একজন লেখক হয়ে আপনি কীভাবে বলেন, ‘ভার্চুয়ালি’ জিনিসটা কী? এটা কেমন আঁতলামি যে আপনি ভার্চুয়াল বিষয়টাই বোঝেন না! বরং এটা হওয়া উচিত ছিল যে, আমরা ভার্চুয়াল বিষয়টা বুঝি। আর বুঝি বলেই এই ভার্চুয়ালি বইমেলার বিপক্ষে আমরা।
বইমেলা তো শুধু লেখক, পাঠক আর প্রকাশকের বিষয় নয়। বইমেলা আয়োজনের সঙ্গে একটা বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার থাকে। পুরো আয়োজনের তত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের লেগে থাকতে হয়। আবার বইমেলার আয়োজনের সাথে সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক আয়োজন, প্রকাশনা উৎসব এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নানা রকম সেবা প্রদানের বিষয়ও থাকে। সব মিলিয়ে এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়, যেখানে বিশাল একটা কর্মী বাহিনীর দীর্ঘ সময়ের সক্রিয় কর্মতৎপরতা জড়িত থাকে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এখন এই করোনাকালে কী খোলা আছে, আর কী বন্ধ আছে, সেসবের তুলনা দেওয়ার চেয়ে করোনা মোকাবিলায় আমাদের সম্মুখযোদ্ধা ডাক্তার এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ বিশ্লেষকদের পরামর্শ কি সেটাই আমলে নেওয়া উচিত। সেটাই তুলে ধরা উচিত। তবে এটা তো ঠিক যদি করোনা পরিস্থিতির উত্তরণ না হয় তাহলে এই বইমেলা পরেও করা যাবে। আর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা যেহেতু আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ধারা রক্ষার চেষ্টা করা তো দোষের কিছু না। বরং এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো উচিত।
এই সুযোগে ভার্চুয়ালি বইমেলার মধ্যে দিয়ে আমরা প্রকশনাগুলোর সক্ষমতাও দেখে নিলাম। প্রকশনাগুলো তাদের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে পারলো। সেটাও তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর ডিজিটালি এই বইমেলা যে একেবারেই নতুন বিষয়, তা কিন্তু নয়। এর আগে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বইমেলা জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলাকেও নির্ধারিত সময় অক্টোবরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হতে দেখেছি। ফ্রাঙ্কফু্র্টের বইমেলা কিন্তু নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এই বইমেলা যে শুধু বই বিক্রির জন্য বিখ্যাত তা কিন্তু নয়, এখানে বই প্রকাশনাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আইন, লাইসেন্স ফি এবং ট্রেডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে থাকে। তারপরেও তারা এই আয়োজনকে ডিজিটালাইজ করেছে। সুতরাং এটাও আমাদের জন্য একটা বড় উদাহরণ।
মূল বিষয়টা হলো, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে পুরো পৃথিবীকেই ভার্চুয়ালি অনেক কিছু করতে হয়েছে, আগামীতেও হয়তো করতে হবে। সেক্ষেত্রে বইমেলার মতো এত বড় একটা আয়োজন যদি একবার ভার্চয়ালি করা হয়েই যায়, আমরা এগিয়ে থাকলাম। আরো একটা বিষয় খেয়াল করলাম, অধিকাংশ লেখক তাদের পোস্টে রকমারি.কম, বাতিঘর, বইবাজার, বাংলা বই এবং বই পাঠাইসহ হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের ভার্চুয়ালি বই বিক্রির বিষয়টি লিখেছেন। কিন্তু আপনিই বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে গুটিকয়েক অনলাইন বুকশপই কি যথেষ্ট? আমার তো মনে হয়, প্রতিটি প্রকাশনারই অনলাইনে বই বিক্রির সক্ষমতা থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রেও ভার্চুয়ালি বইমেলার আয়োজন একটা ভালো অনুষঙ্গ হতে পারে।
আমরা আশা করছি, আগামী বছর নিশ্চয় আগের মতো বইমেলার আয়োজন হবে। কেননা, সামনাসামনি লেখক, পাঠক আর প্রকাশকের যে যোগাযোগ এই মেলায় হয়, তার বিকল্প কোনোভাবেই ভার্চুয়ালি বইমেলা না।