রাজনীতি

ভাস্কর্যবিরোধীদের গ্রেপ্তার চান ১৪ দলের নেতারা

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ অভিহিত করে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। মৌলবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উল্লিখিত দাবি জানান জোটের নেতারা।

১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, ‘ভাস্কর্যের ওপর আঘাত জাতিসত্তার ওপর আঘাত, বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত, শিল্পকর্মের ওপর আঘাত এবং বাঙালির ঐতিহ্যের ওপর আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাসে মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর আঘাত করেছে। হেফাজতের নেতারা, যারা আজকে আন্দোলন করছেন, তাদের নাকের ডগায় চট্টগ্রামে কিন্তু ৩০ বছর ধরে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য আছে। সেটি নিয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, কথাবার্তা নেই। সেটি নিয়ে এতদিন তারা চুপচাপ আছে। বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকরা যেভাবে তাদের ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানি করছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সে ব্যাপারে তাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। তারা কোনো কথা বলেন না।’

‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, সরাসরি গণহত্যায় লিপ্ত ছিল, তাদেরকে রাজনৈতিক-সামাজিক- অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে জিয়াউর রহমান কাজ শুরু করেছিলেন। এরশাদের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়াও তাদেরকে নিয়ে জোট গঠন করেছেন এবং মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন,’ বলেন আমির হোসেন আমু।

সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোশ করা হবে না, জানিয়ে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র বলেন, ‘ধর্মান্ধতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে বিপথগামী করা যাবে না। বিপথগামী করার চেষ্টা হলে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকে যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, যখন ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখন তারা আমাদের শর্ত দিচ্ছে। সাপের মুখে চুমু দিলে পরে সাপ ছোঁবল মারে, এটা খুব সাধারণ কথা। সাপ ছোঁবল মারা ভোলে না। জামায়াত পেছন থেকে সংগঠিত হচ্ছে। সুতরাং জামায়াত এখানে আছে। এখানে হেফাজতকে যদি আমরা মনে করি শুধুই একটা অরাজনৈতিক সংগঠন, তাহলে ভুল করব।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে ফেলার হুঙ্কার ছেড়েছে—এই চিহ্নিত রাজনৈতিক মোল্লারা ক্ষমার অযোগ্য। তাদের ক্ষমা করলে, আবার আমাদের বিপদে পড়তে হবে। তারা আবার পেছন থেকে ছোঁবল মারবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক মোল্লার ফতোয়া দিয়ে নয়, সংবিধান দ্বারাই দেশ চলবে। রাজনৈতিক মোল্লারা বাংলাদেশে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা আলেম না, ওলামা না। এদের মার্কা আছে, দল আছে, সব আছে। এরা চিহ্নিত রাজনৈতিক মোল্লা। রাজনীতির মাঠে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সবকিছুই তারা করছে।’

‘হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়া, এটা সুগভীর চক্রান্তের অংশ। এই ভাস্কর্য ভাঙচুরকারী মোল্লাদের সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতা নয়, ছাড় নয়, নমনীয়তা নয়। তাদের গ্রেপ্তার করে সাজা দিতে হবে,’ বলেন হাসানুল হক ইনু।

আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।